করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২২ মার্চ থেকে ছোট পর্দার সব শুটিং স্থগিত হয়। প্রায় দুই মাস পর বেশ কিছু ঈদ নাটকের সামান্য শুটিং বাকি থাকায় অনেক নির্মাতা এবং প্রযোজক চাচ্ছিলেন শুটিংয়ের সুযোগ দেওয়া হোক। আন্তসংগঠনগুলো ঈদের আগে ১৭ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং চালু করার ঘোষণা দেয়। করোনার মধ্যে শুটিং চালুর এই ঘোষণায় অনেকেই কড়া সমালোচনা করেন। এক দিনের মাথায় সংগঠনগুলো আবার শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে বহাল থাকে। গত ২৮ মে ছোট পর্দার ১৪টি সংগঠন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী পয়লা জুন থেকে পুরোদমে শুটিং শুরু হবে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে।
জুন মাসের শুরু থেকেই সাধারণ ছুটি শিথিল হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ না থাকায় অনেক নির্মাতা প্রযোজক এবং অভিনয়শিল্পীরা যেমন বেকার হয়ে বসে আছেন তেমনি অনেকে মুখ ফুটে বলতে পারছেন না শুটিংয়ের কথা। আন্তসংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুটিং চালু করলেও এর চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি। তাঁরা সরকারি বিধিনিষেধ, তাঁদের নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ভাবছেন।
শুটিং শুরুর ঘোষণা আসার পর থেকেই বিভিন্ন তারকা কিছুটা খুশি হলেও অনেক তারকা পরিস্থিতি বুঝে শুটিং করতে চান। অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি এখনো জানি না শুটিং শুরুর অনুমতি দিয়েছে কি না। সরকার সাধারণ ছুটি আর বাড়াচ্ছে না। এখন নাট্য সংগঠন যদি অনুমতি দেয়, তাহলে আমি শুটিং শুরুর পক্ষে। সবাই তিন মাস ধরে বাসায় বসে থেকে অস্থির হয়ে গেছে। প্রণোদনায় আর কত দিন চলবে। সব প্রোটেকশন, নির্দেশনা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। মৃত্যু একদিন আসবেই। সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে।’
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, ‘শুটিং শুরু নিয়ে আমার সিদ্ধান্ত বা ভাবনা যা-ই বলি সেটা পরিস্থিতি বুঝে। জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলে অনেক শুটিং করা যাবে। আমি চাই না অন্যের বিপদের কারণ হই। আগে সিচুয়েশনটা বুঝে নিই। তারপর শুটিং।’
পাঁচজন নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুটিং শুরুর অনুমতি পাওয়ার পর এখন তাঁরা শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই নির্মাতারা সবাই শুটিং দলের সদস্য ২৫ থেকে ৩০ জনের জায়গায় ১২ থেকে ১৪ জনে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত শিল্পী নিয়ে কাজ করবেন না কেউ-ই। শুটিংয়ের আলোক পরিকল্পক, প্রোডাকশন বয়, ক্যামেরা সহকারী এবং সহকারী পরিচালক আগের চেয়ে প্রায় ৫০ ভাগ কমে যাবে। অনেক নির্মাতা মেকআপম্যান রাখতেই চান না। অনেকে আবার বয়স্ক অভিনেতাদের নিয়ে শুটিং করতে সংশয়ে আছেন। সেভাবে পাণ্ডুলিপি তৈরি করছেন।
আগামী মাসেই ফ্যামিলি ক্রাইসিস ধারাবাহিকের শুটিং শুরু করতে চান নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ। এই নির্মাতা বলেন, ‘ধারাবাহিক নাটক প্রচারের জন্য জুন মাসে আমাকে শুটিংয়ে যেতে হবে। এ জন্য কিছুটা পরিকল্পনা করেছি। শুটিংয়ে গেলে টিমের লাইটম্যান, ক্যামেরা সহকারী, প্রোডাকশনের সদস্য কমাব। এমনও হতে পারে মেকআপম্যান ছাড়াই শুটিং করছি। শুটিংয়ে যেভাবে খাওয়া হয়, সেটা নিয়েও চিন্তায় আছি। তবে শুটিংয়ে খাবার জন্য প্রচুর ভিটামিন সি জাতীয় খাবার থাকবে।’
অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ বলেন, ‘আমি শুটিংয়ের পক্ষে নই। আমার এমনিতেই বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে ডায়াবেটিসসহ অনেক সমস্যা আছে। করোনার এই অবস্থায় কোনোভাবেই চাই না শুটিং করতে। কেউ যদি নিয়মকানুন মেনে কাজ করে করুক। আমি আমার নির্মাতাদের বলব, আপাতত আমাকে গল্পে কোথাও পাঠিয়ে দিতে। পরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার গল্পে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।’
ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘পয়লা জুন থেকে কঠিন নিয়মনীতি মেনে আমাদের শুটিং চালু হচ্ছে। আমাদের আন্তসংগঠনের কিছু নির্দেশনা থাকবে, সেগুলো দেখভাল করার জন্য একটা মনিটরিং সেল থাকবে। তারা শুটিংয়ে শুটিংয়ে ঘুরে দেখবে। পুরোপুরি নির্দেশনা না মানা হলে কেউ শুটিং করতে পারবে না।’
এদিকে শুটিং টিমের শিল্পী, কলাকুশলী কমালে অনেকেই বেকার হয়ে যাবেন। এই প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, ‘সুরক্ষার জন্য কে কীভাবে শুটিং করবে সেটা তার সুবিধামতো হবে। এগুলোর জন্য আমাদের আলাদা নির্দেশনা আছে। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হবে।’
‘সরকার ও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনেই শুটিং চলবে। নিয়ম কেউ না মানলে তার শুটিং বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হবে। স্বাস্থ্যবিধির কথা না মানলে সংশ্লিষ্ট থানায় অবহিত করা হবে।’ কথাগুলো বলেন শিল্পীসংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আলোচনা হয়েছে যদি কোনো শুটিং সেটে পর্যাপ্ত প্রোটেকশন না থাকে, তাহলে সেই সেট থেকে যে কেউ নিজেকে সুরক্ষার জন্য শুটিং না করে চলে যেতে পারবে।’
নির্মাতা তুহিন হোসেন বলেন, শুটিংয়ে লোকসংখ্যা কমলেও খরচ বাড়বে। সে ক্ষেত্রে নাটকের বাজেট কিছু বেড়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে প্রযোজক সাজু মুনতাসির বলেন, ‘এই পরিস্থিতে কাজ করতে গেলে বাজেট কিছুটা বাড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই আবার বাজেট কমবে। এই মুহূর্তে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কাজ শুরু করা জরুরি।’