আওয়ামী লীগের অনেক নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে বারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। সময়ের আবর্তে তাঁদের কেউ কেউ প্রয়াত হয়েছেন। কেউ কেউ এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। এবার এমন বেশ কয়েকজন নেতার সন্তানদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নতুন করে এমন ১১ জনের হাতে উঠেছে নৌকা।
উপমহাদেশের রাজনীতিতে উত্তরাধিকার চর্চার ইতিহাস দীর্ঘ সময়ের। এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও উত্তরাধিকারের পরম্পরা নতুন নয়। বিভিন্ন সময় বাবার আসনে সন্তানেরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় তৃতীয় প্রজন্মের হাতেও এসেছে নৌকা প্রতীক। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম নির্বাচন করে যাচ্ছেন বাবার সূত্রে পাওয়া দলীয় প্রতীক নিয়ে।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রবীণ নেতা এইচ এন আশিকুর রহমান ১৯৮৬ সাল থেকে রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে হারলেও উপনির্বাচনে জয়ী হন। ২০০১ সালেও হেরে যান তিনি। গত তিনটি নির্বাচনে টানা জয় নিয়ে সংসদে আছেন এই নেতা। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদ সামলাচ্ছেন। বয়সের কারণে এবার ভোটে নামেননি। তাঁর ছেলে রাশেক রহমান রংপুর-৫ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। রাশেক রহমান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। তথ্যপ্রযুক্তি ও পুঁজিবাজার খাতে তাঁর ব্যবসা আছে। মেঘনা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক তিনি।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে টানা সাতবারের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম আগে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) করতেন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে সিপিবি থেকেই নির্বাচিত হন। এরপর টানা পাঁচবার নৌকা নিয়েই সংসদে এসেছেন। ৭৫ বছর বয়সী এই নেতা এবারও নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বয়সের বিবেচনায় তাঁর ছেলে মো. মাজহারল ইসলামের হাতে নৌকা তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পেশায় শিক্ষক মাজহারুল বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিমের গল্পটা ভিন্ন। তিনি একসময় বিএনপি করতেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়নও চেয়েছিলেন, পাননি। এরপর তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে, ওই নির্বাচনেই নৌকা নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালে নৌকা নিয়ে হেরে যান। এরপর পরপর দুবার নৌকা পাননি তিনি। তবে ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় পান নৌকার বিপক্ষে। ২০১৮ সালে আবার ফিরে পান নৌকা প্রতীক। দুর্নীতির মামলায় তাঁর সাজা হওয়ায় সংসদ সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবার তাই নিজের ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর নির্বাচনী এলাকা। হাজি সেলিমের বড় ছেলে সুলাইমান সেলিম এবার পুরান ঢাকার আসনটিতে নৌকার প্রার্থী। পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি বাবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যুক্ত ছিলেন তিনি।