২০১৬ সালে বিচ্ছেদের চার বছর পার হয়ে গেছে। আজও অঙ্কিতা লোখান্ডের মুম্বাইয়ের মালাডের বাসার নামফলকে সুশান্তের নাম জ্বলজ্বল করছে। কোথাও ছিল এক অপেক্ষা। কোথাও ছিল এক গভীর বিশ্বাস যে সুশান্ত হয়তো এক দিন তাঁর কাছেই ফিরে আসবেন। তাই নিজের বাসার নামফলক থেকে অঙ্কিতা মুছে ফেলতে পারেননি তাঁর ভালোবাসার মানুষটির নাম।
টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘পবিত্র রিশতা’-এর সেট থেকে সুশান্ত সিং রাজপুত ও অঙ্কিতার প্রেমের পথচলা শুরু। ‘ঝলক দিখলা যা’ নাচের মঞ্চে সুশান্ত অঙ্কিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এদিকে অঙ্কিতাও হ্যাঁ বলতে দেরি করেননি। আজ এই প্রেম শুধুই স্মৃতি। তবে তাঁদের প্রেমের গভীরতার কথা বিটাউনে সবাই জানতেন। ছয় বছর একে অপরের সঙ্গে ভালোবাসায় মগ্ন ছিলেন তাঁরা। একসঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকতেন সুশান্ত ও অঙ্কিতা। শোনা যায়, সুশান্তের ক্যারিয়ারই তাঁদের ভালোবাসায় ফাটল ধরায়। অঙ্কিতা চেয়েছিলেন তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ের বন্ধনে বেঁধে ফেলতে। তাঁদের সম্পর্কের এক নতুন নাম দিতে। এমনকি সংবাদমাধ্যমেও তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে পেলে সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্ন, ‘কবে বিয়ে করছেন?’ কিন্তু সুশান্তের দুচোখ জুড়ে তখন কেবল বলিউডের স্বপ্ন। ‘কাই পো চে’ ছবির সাফল্যের পর একের পর এক স্বপ্নের হাতছানি। এদিকে ‘ধোনি’-এর বায়োপিকের মতো বড় ছবিতে তখন কাজ করছেন। তাই বিয়ে নয়, নিজের ক্যারিয়ারকেই বেছে নেন সুশান্ত৷
সুশান্ত ও অঙ্কিতা। নিঃশব্দে সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন অঙ্কিতা। ২০১৬ সালে তাঁদের সম্পর্কের ইতি হয়। সুশান্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দীর্ঘদিন বিষণ্নতায় ডুবে ছিলেন অঙ্কিতা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, সুশান্তের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তাঁর মানসিক অবস্থার কথা। ‘সেই সময় আমি জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে আমার পরিবারকে সব সময় আমার পাশে পেয়েছি। আমাদের বিশাল এক পরিবার। আর পরিবারের প্রত্যেকের কাছে আমি খুব আদুরে। ওরা আবার আমাকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। আমার বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবনে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। আমার পরিবারই আমার সবকিছু। নিয়মিত মেডিটেশন করি। আমি এখন ভালো আছি। আর জীবনের সব পরিস্থিতিকে গ্রহণ করতে শিখেছি। এখন দুঃখে যেমন ভেঙে পড়ি না, তেমনি কোনো খুশিতে উচ্ছ্বসিত হই না।’ তবে সুশান্তের আত্মহত্যার খবর আবার তাঁর ভগ্ন হৃদয় চুরচুর করে দিল। তাই এবার চিরবিচ্ছেদের ভারে ডুবে গেলেন অঙ্কিতা। সুশান্তের বান্দ্রার বাসায় কোনোক্রমে এসেছিলেন তিনি। ডুকরে ডুকরে কেঁদেছেন। তাঁর দুচোখ জুড়ে ছিল শুধুই বিষণ্নতা।
সুশান্ত সিং রাজপুত ও অঙ্কিতা লোখান্ডে। অঙ্কিতার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর সুশান্তের জীবনে একাধিক নারী এসেছেন। কৃতি শ্যনন, সারা আলী খান, রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে এই বলিউড সুপারস্টারের নাম জুড়েছে। কিন্তু কারোর সঙ্গেই সুশান্তের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। এত ভালোবাসার মধ্যেও তিনি ছিলেন একা। তাই সুশান্তের মনোবিদ বলেছেন যে অঙ্কিতাকে সুশান্ত খুব ভালোবাসতেন। সুশান্ত নাকি জানিয়েছেন, অঙ্কিতার মতো করে তাঁকে কেউ কখনো ভালোবাসতে পারেননি। অঙ্কিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একাকিত্ব অনুভব করতেন বলেও একাধিক মনোবিদ পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতেও সুশান্ত কেবলই অঙ্কিতার অভাব অনুভব করেছেন। সুশান্তের কাছের বন্ধুদের কথায়, ‘সুশান্ত অঙ্কিতাকেই প্রকৃত ভালোবাসত। আজ যদি অঙ্কিতা থাকত, তাহলে সুশান্তের জীবনের এমন পরিণতি ঘটত না।’
অন্যদিকে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে সুশান্তের আত্মহত্যার ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল। চূড়ান্ত রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে সুশান্ত গলায় ফাঁস দিয়েই আত্মহত্যা করেছেন। শ্বাসরোধের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সুশান্তের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তিনজন চিকিৎসকের স্বাক্ষর ছিল। চূড়ান্ত রিপোর্টে পাঁচজন চিকিৎসক স্বাক্ষর করেছেন। অ্যাসফিক্সিয়ার কারণে সুশান্তের মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, শরীরে অক্সিজেনের অভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে এখন তদন্তকারীরা সুশান্তের ভিসরা রিপোর্টের প্রতীক্ষায় আছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে সুশান্তের শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। আর তাঁর নখ একদম পরিষ্কার ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটা আত্মহত্যার ঘটনা।
মুম্বাই পুলিশ সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের জন্য ২৩ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে। সুশান্তের আত্মহত্যার কারণ খুঁজে বের করতে মুম্বাই পুলিশের তদন্ত চলছে। তারা কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছে না।