ঢাকা , শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ঢাকার কাছেই অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, কারখানা যাবে নবাবগঞ্জ

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুলাই ২০২০
  • ৮৮৩ পঠিত

রাজধানীর খুব কাছেই একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৪ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বেজা ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক অনুমোদন আগেই নেওয়া ছিল। এবার প্রকল্পের অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরুর আশা করা যায়।

নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গত বছরের ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতিগত অনুমোদন পায় বেজা। এরপর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসকে (পিডব্লিউসি) দিয়ে একটি প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়।

প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঢাকা থেকে ৩৯ কিলোমিটার, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ২৫৬ কিলোমিটার দূরে। এর ৮৭৪ একর জমির মধ্যে ৮৩৪ একরই ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব জমিতে কোনো বসতি নেই, বছরের একটা সময় পানির নিচে থাকে, বাকি সময় কৃষিকাজ হয়।

সম্ভাব্য স্থানটির কাছেই ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী। পিডব্লিউসির প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রথম শ্রেণির রুট হলো ধলেশ্বরী নদী। এর গভীরতা আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিটার। ফলে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটির নৌপথেও যোগাযোগ সুবিধা থাকবে।

পিডব্লিউসি বলেছে, সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো মূলত রাজধানী অথবা বড় শহরের কাছে অবস্থিত। এই অবস্থানগত সুবিধা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারখানাগুলোর বাজার ধরা, সংযোগশিল্পের সুবিধা ও জনবলের প্রাপ্যতা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করে। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেহেতু ঢাকার কাছে, তাই এটিতে বিনিয়োগকারীরা ওই সুবিধাগুলো পাবেন।

ঢাকার বিভিন্ন কারখানার জন্য ৮৭৪ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
জমি পাবে অন্যরাও

নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত কী কী চান, তা জানতে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করেছে পিডব্লিউসি। এগুলোর মধ্যে ১২৮টি দেশি প্রতিষ্ঠান, বাকিগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। জরিপে উঠে আসে যে সেখানে মোট ৯টি খাতে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সেগুলো হলো খাদ্য ও পানীয়, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, নন–মেটালিক মিনারেলস, ওষুধ, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও আসবাব, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক ও রাবার।

ঢাকায় যাঁরা হালকা প্রকৌশল, প্লাস্টিক ও রাসায়নিকের কারখানা গড়ে তুলেছেন, তাঁরা জমির কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের পর বছর আমরা শুধু জমি পাওয়ার কথা শুনছি। আসলে পাচ্ছি না।’

বিভিন্ন সমিতির সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকায় এখন রাসায়নিক ব্যবসা করেন ১ হাজার ২০০ ব্যবসায়ী। সেখানে প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০। এ ছাড়া ধোলাইখাল, নারিন্দা ও টিপু সুলতান রোড ঘিরে অনেক হালকা প্রকৌশল শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।

এসব কারখানা রাজধানীকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। চকবাজারে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লাগা আগুনে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১২৪ জন। পুরান ঢাকায় একেকটি দুর্ঘটনা ঘটে, আর শিল্প সরানোর দাবি জোরালো হয়। পরে আর অগ্রগতি দেখা যায় না।

বেজা অবশ্য নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার কথা বলছে প্রকল্প প্রস্তাবে।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৯ সালে মুন্সিগঞ্জে ৫০ একর জমিতে হালকা প্রকৌশল শিল্পের জন্য একটি শিল্পনগর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখনো শুনছি, কাজ চলছে। আরও কত বছর চলবে, কে জানে।’ তিনি বলেন, ‘নবাবগঞ্জ ভালো জায়গা। জমি পেলে আমরা সেখানে যাব। তবে শিল্পনগরে সব অবকাঠামো থাকা দরকার। বিসিক শিল্পনগরের মতো হাঁটুসমান কাদা যাতে না হয়।’

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

ঢাকার কাছেই অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, কারখানা যাবে নবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুলাই ২০২০

রাজধানীর খুব কাছেই একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৪ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বেজা ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক অনুমোদন আগেই নেওয়া ছিল। এবার প্রকল্পের অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরুর আশা করা যায়।

নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গত বছরের ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতিগত অনুমোদন পায় বেজা। এরপর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসকে (পিডব্লিউসি) দিয়ে একটি প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়।

প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঢাকা থেকে ৩৯ কিলোমিটার, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ২৫৬ কিলোমিটার দূরে। এর ৮৭৪ একর জমির মধ্যে ৮৩৪ একরই ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব জমিতে কোনো বসতি নেই, বছরের একটা সময় পানির নিচে থাকে, বাকি সময় কৃষিকাজ হয়।

সম্ভাব্য স্থানটির কাছেই ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী। পিডব্লিউসির প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রথম শ্রেণির রুট হলো ধলেশ্বরী নদী। এর গভীরতা আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিটার। ফলে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটির নৌপথেও যোগাযোগ সুবিধা থাকবে।

পিডব্লিউসি বলেছে, সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো মূলত রাজধানী অথবা বড় শহরের কাছে অবস্থিত। এই অবস্থানগত সুবিধা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারখানাগুলোর বাজার ধরা, সংযোগশিল্পের সুবিধা ও জনবলের প্রাপ্যতা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করে। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেহেতু ঢাকার কাছে, তাই এটিতে বিনিয়োগকারীরা ওই সুবিধাগুলো পাবেন।

ঢাকার বিভিন্ন কারখানার জন্য ৮৭৪ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
জমি পাবে অন্যরাও

নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত কী কী চান, তা জানতে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করেছে পিডব্লিউসি। এগুলোর মধ্যে ১২৮টি দেশি প্রতিষ্ঠান, বাকিগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। জরিপে উঠে আসে যে সেখানে মোট ৯টি খাতে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সেগুলো হলো খাদ্য ও পানীয়, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, নন–মেটালিক মিনারেলস, ওষুধ, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও আসবাব, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক ও রাবার।

ঢাকায় যাঁরা হালকা প্রকৌশল, প্লাস্টিক ও রাসায়নিকের কারখানা গড়ে তুলেছেন, তাঁরা জমির কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের পর বছর আমরা শুধু জমি পাওয়ার কথা শুনছি। আসলে পাচ্ছি না।’

বিভিন্ন সমিতির সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকায় এখন রাসায়নিক ব্যবসা করেন ১ হাজার ২০০ ব্যবসায়ী। সেখানে প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০। এ ছাড়া ধোলাইখাল, নারিন্দা ও টিপু সুলতান রোড ঘিরে অনেক হালকা প্রকৌশল শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।

এসব কারখানা রাজধানীকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। চকবাজারে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লাগা আগুনে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১২৪ জন। পুরান ঢাকায় একেকটি দুর্ঘটনা ঘটে, আর শিল্প সরানোর দাবি জোরালো হয়। পরে আর অগ্রগতি দেখা যায় না।

বেজা অবশ্য নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার কথা বলছে প্রকল্প প্রস্তাবে।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৯ সালে মুন্সিগঞ্জে ৫০ একর জমিতে হালকা প্রকৌশল শিল্পের জন্য একটি শিল্পনগর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখনো শুনছি, কাজ চলছে। আরও কত বছর চলবে, কে জানে।’ তিনি বলেন, ‘নবাবগঞ্জ ভালো জায়গা। জমি পেলে আমরা সেখানে যাব। তবে শিল্পনগরে সব অবকাঠামো থাকা দরকার। বিসিক শিল্পনগরের মতো হাঁটুসমান কাদা যাতে না হয়।’