বাবা, ‘গঙ্গাপদ ঢাকি’ হঠাৎই অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছেন স্বাদ, গন্ধ পাচ্ছেন না বলে।
দশমীর দিন তাঁকে সিঁদুর পরিয়ে স্ত্রী-র মর্যাদা দিয়েছে সঙ্গীত।
হার্ট অ্যাটাকে মামা ভর্তি হাসপাতালে।
তারপরেও মাত্র ২১ সপ্তাহে রানি রাসমণি-র রেটিং ছুঁয়েছে জি বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘যমুনা ঢাকি’।
মেগার মতোই রিল-রিয়েল লাইফ নিয়ে মারাত্মক উত্তেজনায় টালমাটাল শ্বেতা ভট্টাচার্য মেলে ধরলেন নিজেকে আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে।
কেমন আছেন মামা?
শ্বেতা: ভাল নয়। দুটো আর্টারি ব্লক।
দুশ্চিন্তা নিয়ে অভিনয়?
শ্বেতা: মনখারাপ নিয়ে। জানেন, এই খবর আসার পরের দিনের শুটে আমার প্রচুর কান্নার দৃশ্য ছিল। গ্লিসারিন ছাড়াই কেঁদেছি অঝোরে!
এর মধ্যেও বড় পাওনা, মাত্র ২১ দিনে রেটিং ৮.৭। রানি রাসমনির সমান সমান ‘যমুনা ঢাকি’…
শ্বেতা: স্টার জলসার রেটিং অনুযায়ী ৮.৯। সেই দিক থেকে আমরা চ্যানেল টপার! এর পুরো কৃতিত্বটাই স্নেহাশিস চক্রবর্তীর এবং জি বাংলার। শুনেছি, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আমার নাম সাজেস্ট করেছিল। এই নিয়ে ছ’টা কাজ করলাম স্নেহাশিসদার সঙ্গে। ওঁর কলমের কোনও জবাব নেই। জানতাম, এরকমই কিছু হবে। শুরু থেকে একের পর এক অঘটন ঘটেছে। তারপরেও এই রেজাল্ট ওঁর জন্যেই।
আরও বাধা এসেছিল?
শ্বেতা: পর্দায় যিনি আমার বাবা গঙ্গাপদ ঢাকি, তিনি বেশ কিছুদিন কাজের পরেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বললেন, স্বাদ, গন্ধ পাচ্ছেন না। তিনি ছুটিতে। তাঁকে নেপথ্যে রেখেই গল্প এগোল। এটা প্রথম বাঁক। তারপর ভাইরাল ফিভারে স্নেহাশিসদা কাবু। যিনি একা হাতে চিত্রনাট্য থেকে আবহ, সংলাপ সমস্ত দেখেন। তারপরেও এই রেজাল্ট দেখে ভয় ভয়েই বলছি, ‘নজর না লগ যায়ে’!
এই রে! আপনাদের স্টুডিয়োতেও করোনা হানা?
শ্বেতা: প্লিজ, ওসব কিছু নয়। আচমকা অসুস্থ তো মানুষ হতেই পারে! যথেষ্ট সাবধানতা নিয়েই কাজ হচ্ছে সৃজনী স্টুডিয়োয়। কারোর যাতে সমস্যা না হয় ওই জন্যেই ‘গঙ্গাপদ ঢাকি’র চরিত্রাভিনেতাকে সঙ্গে সঙ্গে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আমি যে রেটে স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করছি তা দেখে বাকিরা বলছেন, হাতের চামড়া না খুলে বেরিয়ে আসে। সবাই সব নিয়ম মানছেন। তবু বলব, হ্যাঁ ভয় তো একটু করছেই।
এদিকে পর্দাতে বড় ধামাকা, দশমীতে যমুনাকে সিঁদুর পরাবে সঙ্গীত…
শ্বেতা: একদম। বাড়ির পছন্দ করা মেয়েকে সরিয়ে আমাকে মা দুর্গার সামনে সিঁদুর পরিয়ে দেবে। তার পর যমুনা ফিরে যাবে দেশে। গ্রামের মানুষ তাই নিয়ে যখন সমালোচনায় মুখর তখনই সঙ্গীত যাবে সেখানে। তারপরের টুকু পর্দাতে… বলেই ছোট্ট হাসি।
‘ঝিল’, ‘ঝুমকো’র পরে ‘যমুনা ঢাকি’। পর পর ভিন্ন স্বাদের চরিত্র। দর্শকের ফিড ব্যাক কেমন?
শ্বেতা: স্নেহাশিসদা মানেই ইউনিক কিছু। সেটাই হল আবার। ‘তুমি রবে নীরবে’র মূক, বধির ঝিল হয়ে সাইন কোড ল্যাঙ্গুয়েজ শিখেছি। ‘জড়োয়ার ঝুমকো’র ঝুমকো হয়ে গয়না বানানোর প্রাথমিক স্তর জেনেছি। এ বার মহিলা ঢাকি হয়ে ঢাক বাজাতেও শিখে যাচ্ছি। দারুণ লাগছে। দর্শকেরাও উপভোগ করছেন। সোশ্যালে ভাল ভাল মন্তব্য করছেন।
টেলিকাস্টের প্রথম দিন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী স্টার জলসার ‘তিতলি’। আপনাকে যদি টপকে যায়?
শ্বেতা: একটুও না। প্রথমত, স্নেহাশিসদার কলমের ওপর আমার অগাধ আস্থা। দ্বিতীয়ত, আমি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী। তৃতীয় ব্যক্তি নয়। ফলে, ‘তিতলি’কে নিয়ে কোনও টেনশন ছিল না। বরং শুভ কামনা জানাব ‘তিতলি’কে। আরও ভাল করুক ওই মেগাও।
যে চরিত্র করছেন বাস্তবে সেই রকম মহিলা ঢাকিকে চেনেন?
শ্বেতা: আমার সে অর্থে কোনও মহিলা ঢাকি চেনা নেই। কোনও মেয়েকে ঢাক বাজাতেও দেখিনি কখনও। তবে প্রথমেই মাথাতে এসেছিল, অভাবের সংসারে যে মেয়ের লড়াই সে মেয়েকে রোগা-পাতলা হতে হবে। আমি আগে বেশ গোলগাল ছিলাম। তাই প্রথমে নিজের ওজন ঝরিয়ে ফেলি। তারপর, পাড়ার পুজোয় যিনি ঢাক বাজান তাঁর বাড়িতে গেলাম। আস্তে আস্তে শিখতে শুরু করলাম ঢাক বাজানো শেখা। ফ্লোরে রোজ প্রফেশনাল ঢাকি এসে শেখাতে লাগলেন কী ভাবে ডান হাতের কাঠিটা ধরতে হয়। কীভাবে বাঁ হাতের কাঠি। বোল তুলতে হয় কী করে। এখন একটা বোল প্রফেশনাল ঢাকি তুলে দিলে বাকিটা বাজিয়ে নিতে পারি (হাসি)।
কেমন লাগল প্রথম ঢাক বাজিয়ে?
শ্বেতা: (হাসতে হাসতে) খ-উ-ব ভাল লেগেছিল। হয়তো প্রফেশনাল ঢাকির মতো বাজাতে পারছি না এখনও। যদিও প্রথম প্রথম গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হত। হাতের ওপর, আঙুলের ওপর কাঠির বাড়ি দিয়ে ফেলতাম। কিন্তু আনন্দ হত ভীষণ। আরও একটা নতুন কিছু সিরিয়ালের দৌলতে শেখা তো হচ্ছে! এ বার পুজোয় শিওর পাড়ায় ঢাক বাজাব।
যমুনার কথা তো হচ্ছে, ঢাকির গল্প শুনলাম। ব্যক্তি শ্বেতা কেমন?
শ্বেতা: ভীষণ ইমোশনাল ফুল। কেউ যদি গ্লিসারিন লাগিয়ে মিথ্যে কাঁদে, আমি সহানুভূতিতে গলে যাব তার প্রতি। আমায় ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করা, বোকা বানানো খুব সোজা। তাই আমার মা-বাবা, পরিবারের সবার খুব ভয় আমায় নিয়ে। একই সঙ্গে মুখের ওপর ন্যায্য কথা বলতে একটুও ভয় পাই না। মন রাখতে মিষ্টি করে কথা বলা ধাতে নেই। অন্যায়ের প্রতিবাদ সামনাসামনি করি বলে অনেকের কাছেই ভীষণ খারাপ। তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এই জন্যেই ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু আমার প্রায় নেইই।
‘বন্ধু’ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে টেকা যায়!
শ্বেতা: (অল্প হেসে) ১১ বছর রয়ে গেলাম তো! আসলে, কিছু অভিজ্ঞতা আমার বিশ্বাস, মন, অনুভূতি ভেঙে দিয়েছে। আমি দেখেছি, দিনের পর দিন মানুষ কেমন মুখোশ পরে সামনে প্রশংসা আর আড়ালে নিন্দে করে। হাসতে হাসতে পেছনে ছুরি বসায়। এ সব দেখার পর বন্ধুত্ব গড়তে ভয় পাই। নিজেকে বাঁচাতে দূরত্ব মেনে চলি। ইন্ডাস্ট্রিতে তাই আমার খুব কাছের বন্ধু একজনই, সহমিতা। নিজেকে বুঝিয়েছি, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আসি। বন্ধুত্ব পাতাতে তো নয়! ঘরোয়া মেয়ে আমি। কাজের বাইরে মা, বাবা আর স্কুলের বন্ধু দেবযানী আছে। দরকারে তাঁদের সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশব, আনন্দ করব।
তাহলে তো কাস্টিং কাউচ, নেপোটিজমও দেখেছেন?
শ্বেতা: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তিনি এ সব থেকে বাঁচিয়েছেন। ওই যে বললাম না, ৬টি সেরা কাজ স্নেহাশিসদার সঙ্গে। উনি বট গাছের মতো আগলান তাঁর কাছে কাজ করতে আসা সবাইকে। বিশেষ করে আমাদের মতো তুলনায় কম অভিজ্ঞদের। ফলে, আমি নিশ্চিন্ত।
প্রেম করেন? নাকি তাতেও ভয়?
শ্বেতা: (হেসে ফেলে) ওটা করি। বেশ অনেক দিনের সম্পর্ক। ইন্ডাস্ট্রির কেউ নন। এখনও জানানোর সময় আসেনি।
সঙ্গীত-যমুনার মতো অসম বিয়ে নাকি?
শ্বেতা: (খিলখিল হাসি) না না, যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন বয়ফ্রেন্ড সেখানে ওয়েল এস্টাব্লিজড। আর এক্ষুণি বিয়ে নিয়েও কিছু ভাবছি না। বরং, যমুনা ঢাকি চরিত্রটাকে এনজয় করছি। আরেকটু কাজ করি?
গয়না বানানো শিখেছেন। ঢাক বাজানোটাও শিখে নিলেন। আপনার কাজের কোনও দিন অভাব হবে না…
শ্বেতা: (হাসতে হাসতে) সবটাই প্রাথমিক স্তরে। তাই পেশা হিসেবে কোনওটাই নিতে পারব না। কিন্তু কাজের অভাব হবে না, এটা জানি। আর হলেও আরও একটি কাজ খুব ভাল পারি, নাচতে। ওটা পাশাপাশি পেশা হিসেবে রাখতেই পারি।
ঢাকের তালে?
শ্বেতা: গানের তালেও (হাসি)। তাই অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় ধুনুচি নিয়ে, দশমীর ঢাকে তালের সঙ্গে ছাড়াও আলাদা অনেক পারফর্ম করেছি।
মহিলা পুরোহিতের চরিত্রে অভিনয়, তাঁর কাজ শেখাটাই বা বাকি থাকে কেন?
শ্বেতা: বড় পর্দায় নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘‘ব্রহ্মা জানেন…’’ দেখেছি। দারুণ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। কিন্তু বড় পর্দায় কাজ এক্ষুনি করতে চাই না। তাই ছোট পর্দায় এমন চরিত্র পেলে লুফে নেব। কারণ, এই চরিত্রও যমুনা ঢাকির মতোই হিট হবে। মেয়েদের লড়াই, তাঁদের নতুন আরও একটি পেশার ওপর আলো-ও ফেলা হবে। দর্শক বুঝুন, ছোট পর্দা আর ‘বোকা বাক্স’ নেই।