মশিয়ালী গ্রামের পূর্ব পাড়ার দিনমজুর রাজ্জাক মোল্লা ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শেখ জাকারিয়ার প্রতিষ্ঠান দোয়েল সমবায় সমিতি থেকে। কয়েক সপ্তাহ ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। এ কারণে একদিন শীতের গভীর রাতে দলবল নিয়ে ওই বাড়িতে হানা দেন জাকারিয়া। সবার সামনে ব্যাপক মারধর করার পর ওই রাতেই রাজ্জাককে পুকুরে নামিয়ে বস্ত্রহীন করে চোবানো হয়। লজ্জায়-অপমানে ঘটনার পরদিনই পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়েন রাজ্জাক মোল্লা। ঘটনাটি প্রায় চার বছর আগের। রাজ্জাকের টিনের ছাউনির কাঁচা বাড়িটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে।
এলাকার কয়েকজন জানান, রাজ্জাকের ওপর নির্যাতনের সময় এলাকার মানুষ তাঁকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কারও কথাই শোনেননি জাকারিয়া। সবাই হতভম্ব হয়ে ওই নির্যাতন দেখেছেন আর চোখের পানি ফেলেছেন।
গ্রামবাসীর সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। এ সময় শেখ জাকারিয়া ও তাঁর ভাইদের ছোড়া গুলিতে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন, যাঁদের মধ্যে তিনজন পরে মারা যান। আর গ্রামবাসীর পিটুনিতে আরও একজন নিহত হন। জাকারিয়াদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেন গ্রামবাসী। তিনজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন জাকারিয়ার ভাই শেখ জাফরিন, শ্যালক আরমান ও চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর। গতকাল জাফরিনের আট দিন ও অন্য দুজনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
নির্যাতনের করুণ গল্প
ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ভিটাবাড়ি ওই তিন ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এলাকাছাড়া হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
ওই তিন ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার প্রায় ৮০ বছর বয়স্ক ইসমাঈল হোসেন মোল্লা গ্রামের পূর্ব পাড়া মসজিদের ইমাম। গ্রামের প্রধান সড়কের পাশে থাকা তাঁর জমির দিকে নজর যায় জাকারিয়ার মেজ ভাই শেখ মিল্টনের। চাপ দিতে থাকেন জমি বিক্রি করার জন্য। জমি ছাড়তে অস্বীকার করায় একদিন মসজিদের মধ্যেই অস্ত্র নিয়ে হানা দেন জাকারিয়া ও মিল্টন। পরে সমঝোতার মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। রাস্তার পাশের ওই জমিতেই এখন আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি মিল্টনের।
বৃদ্ধ ইসমাঈল হোসেন বলেন, ওই তিন ভাইয়ের কথার ওপর কিছু বলবে, এমন কোনো মানুষ এলাকায় নেই। কেউ কিছু বলতে গেলেই তাঁকে মাদক বা অস্ত্র দিয়ে থানায় ধরিয়ে দেওয়া হতো।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের খালিশপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনালী সেন বলেন, খানজাহান আলী থানায় তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা আছে। তাঁরা গ্রেপ্তার হয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার গ্রামে ফেরেন।