ঢাকা , শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

পাটের সুসময়ে সরকারি পাটকলে তালা

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০
  • ৮৭২ পঠিত

লোকসানের কারণে সরকারি ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি পাটকল লাভ করছে। তাদের হাত ধরে করোনাভাইরাসের এই সময়েও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তাতে দীর্ঘদিন পর তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের জায়গা দখল করেছে পাট।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ৮৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানির মধ্যে পাটসুতার অবদান ৫৬ কোটি ডলার। সেখানে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। তা ছাড়া ১২ কোটি ডলারের কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর পাটের ব্যাগ রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ডলারের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে পাটের ব্যাগের রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ২৮ শতাংশের মতো।

বেসরকারি খাত লাভজনক হলেও সরকারের পাটকলগুলো গত ১০ বছরে ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। এই ১০ বছরের মধ্যে একবারই ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মুনাফা হয়, সেটিও ২০১০-১১ অর্থবছরে। সরকারের পক্ষে এ লোকসানের বোঝা আর টানা সম্ভব হচ্ছে না, তাই শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। তৎকালীন এরশাদ সরকার ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়। ৮টি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় আদমজী জুট মিল। বর্তমানে বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি ননজুট কারখানা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ হচ্ছে। ফলে পাটের ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে। কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেই বার্ষিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি পাটের ব্যাগের চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা দেখছি। তা ছাড়া গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বাগানের জন্যও পাটপণ্য জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় বহুমুখী পাটপণ্যের চাহিদা বাড়বে।’

সরকারি পাটকলের বিষয়ে রাশেদুল করিম আরও বলেন, ‘ভারত তাদের পাটকলগুলো নব্বইয়ের দশকে আধুনিকায়ন করলেও আমরা পারিনি। আমাদের সরকারি পাটকলে ৬০ থেকে ৭০ বছরের যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, তা দিয়ে ২ থেকে ৩টির বেশি পণ্য উৎপাদন করা যায় না। বর্তমানে বেসরকারি পাটকলগুলো যে পাটসুতা রপ্তানি করে মুনাফা করছে, সেই পণ্যটিই উৎপাদন করে না বিজেএমসির মিল।’

রপ্তানিতে পাটজাত পণ্যে বেসরকারি খাত ভালো করলেও সেটির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর বন্যার কারণে পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই কাঁচা পাটের দাম ছিল বাড়তি। ফলে, পণ্যের দামও বেড়েছে। তা ছাড়া গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছিল ২০ শতাংশ। এসব কারণে ক্রয়াদেশ না বাড়লেও রপ্তানি আয় বেড়েছে।

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

পাটের সুসময়ে সরকারি পাটকলে তালা

প্রকাশিত : ০২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০

লোকসানের কারণে সরকারি ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি পাটকল লাভ করছে। তাদের হাত ধরে করোনাভাইরাসের এই সময়েও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তাতে দীর্ঘদিন পর তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের জায়গা দখল করেছে পাট।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ৮৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানির মধ্যে পাটসুতার অবদান ৫৬ কোটি ডলার। সেখানে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। তা ছাড়া ১২ কোটি ডলারের কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর পাটের ব্যাগ রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ডলারের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে পাটের ব্যাগের রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ২৮ শতাংশের মতো।

বেসরকারি খাত লাভজনক হলেও সরকারের পাটকলগুলো গত ১০ বছরে ৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। এই ১০ বছরের মধ্যে একবারই ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মুনাফা হয়, সেটিও ২০১০-১১ অর্থবছরে। সরকারের পক্ষে এ লোকসানের বোঝা আর টানা সম্ভব হচ্ছে না, তাই শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। তৎকালীন এরশাদ সরকার ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়। ৮টি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় আদমজী জুট মিল। বর্তমানে বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি ননজুট কারখানা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ হচ্ছে। ফলে পাটের ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে। কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেই বার্ষিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি পাটের ব্যাগের চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা দেখছি। তা ছাড়া গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বাগানের জন্যও পাটপণ্য জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় বহুমুখী পাটপণ্যের চাহিদা বাড়বে।’

সরকারি পাটকলের বিষয়ে রাশেদুল করিম আরও বলেন, ‘ভারত তাদের পাটকলগুলো নব্বইয়ের দশকে আধুনিকায়ন করলেও আমরা পারিনি। আমাদের সরকারি পাটকলে ৬০ থেকে ৭০ বছরের যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, তা দিয়ে ২ থেকে ৩টির বেশি পণ্য উৎপাদন করা যায় না। বর্তমানে বেসরকারি পাটকলগুলো যে পাটসুতা রপ্তানি করে মুনাফা করছে, সেই পণ্যটিই উৎপাদন করে না বিজেএমসির মিল।’

রপ্তানিতে পাটজাত পণ্যে বেসরকারি খাত ভালো করলেও সেটির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর বন্যার কারণে পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই কাঁচা পাটের দাম ছিল বাড়তি। ফলে, পণ্যের দামও বেড়েছে। তা ছাড়া গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছিল ২০ শতাংশ। এসব কারণে ক্রয়াদেশ না বাড়লেও রপ্তানি আয় বেড়েছে।