এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ফরাছত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগামী দুই বছর তিনি কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না।
পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ বেশ কিছু অভিযোগের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় তিন বছর সময় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফরাছত আলীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, তাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি। এ কারণে তাঁকে দুই বছরের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দীর্ঘ শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুরুতে ব্যাংকটিতে ফরাছত আলীর শেয়ার ছিল ২ কোটি ১০০
বিক্রির ফলে তা কমে হয়েছে প্রায় ১ কোটি, যা দিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই
তাঁর শেয়ার কিনেছেন ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু।
ফরাছত আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ ব্যাংককে মিথ্য তথ্য প্রদান করা। তাঁর কাছে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে গৃহীত সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে প্রতিফলন না করে অসত্য বর্ণনা প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, যার দায় অনুমোদনকারী হিসেবে ফরাছত আলীর ওপর বর্তায়।
এদিকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) সূত্রে জানা গেছে, যাত্রা শুরুর সময় ব্যাংকটিতে ফরাছত আলীর শেয়ার ছিল ২ কোটি ১০০। পরিচালক পদ থেকে বাদ পড়ার পর ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের কাছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার স্থানান্তর করেছেন। এতে ব্যাংকটিতে ফরাছত আলীর শেয়ার কমে যায়, যা দিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া ফরাছত আলী মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালককে বেনামে ঋণ দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ওই পরিচালক এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক না হয়েও পর্ষদ সভায় অংশ নিয়েছেন। ফরাছত আলী তাঁকে এসব কাজে সহায়তা করেছেন। এসব কারণে ফরাছত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অন্যদিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের যে পরিচালককে ফরাছত আলী বেআইনি সুবিধা দিয়েছেন, তাঁকে গত জানুয়ারিতে পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয় ব্যাংক খাতের বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করেও ফরাছত আলীকে ফোনে পাওয়া যায়নি।