ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশি কর্মীরা, মালয়েশিয়ায় টিকে থাকার লড়াই

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মে ২০২০
  • ১৩৬২ পঠিত

মালয়েশিয়া প্রবাসী সোহেল মোল্লা। তার আট সহকর্মীসহ প্রতি বছর ঈদের সময় দেশে থাকা পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতেন।পাঠানো টাকা দিয়ে নতুন পোশাক কেনা হত। প্রবাসে থেকেও পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দে মেতে উঠতেন। কিন্তু এই বছর সেটা ঘটেনি। কারণ মহামারি করোনায় কর্মহীন অবস্থায় কোয়ারেন্টিনে থেকে এখনটিকে থাকার লড়াই করছেন তারা।

প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে গত আড়াই মাস ধরে কর্মহীন অবস্থায় নিজেদের খাওয়ার টাকাই পকেটে নেই। চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের। সোহেল বলছিলেন, লকডাউনের প্রথম দিকে নিয়োগকর্তা ৫০০ রিঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং কিছু খাবার দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে  ৫০০ রিঙ্গিত  তাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে।

সোহেল বলছিলেন, “সাধারণত ঈদে আমরা বিরিয়ানি রান্না করি, পোলাও, রুটি রান্না করি এবং আমাদের প্রিয় মিষ্টি শেমাই তৈরি করি । এই বছর কিছুই করা হয়নি।”

সোহেল ও তার বন্ধুরা পেটালিং জায়ার একটি সাবলেটে থাকেন, যা একসময় অফিস ছিল। তিনটি কক্ষেই তারা কয়জন মিলে থাকেন। রয়েছে একটি ছোট রান্নাঘর। বিকেলে, কক্ষগুলি অত্যন্ত গরম হয়, যা রমজানের সময় খুব কষ্টে ছিলেন।
এখানে যারা রয়েছেন, বেশিরভাগ লোকই নির্মাণ কাজ করেন। যেহেতু সরকার সমস্ত নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে, কখন তারা কাজে ফিরতে পারে তা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তায় দিন পার করতে হচ্ছে। সোহেল বলেছিলেন, এ এলাকায় প্রায় ৫৫ জন অভিবাসী রয়েছেন এবং আরও দশজন বাংলাদেশিসহ  অন্য সাবলেটে নিয়ে যান।

আব্বাস (৩০) নয় বছর আগে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। আব্বাসের থাকার  জায়গাটি সোহেলের চেয়ে কিছুটা ভাল ।
আব্বাস বলেন, “মালয়েশিয়া আসার পর কিছুদিন পরে আমার বাবা মারা গেলেন। বড় হিসাবে, পরিবার এবং আমার চার ভাইবোনকে দেখাশোনা করার ভার এখন আমার উপর।”

আব্বাস বলছিলেন, “আমি গড়ে ১,৮০০ রিঙ্গিত উপার্জন করি এবং প্রতি মাসে ১,০০০ রিঙ্গিত বাড়ি পাঠাই। ঈদের সময় টাকা পাঠাতে পারিনি। কতইনা কষ্টে রয়েছে দেশে থাকা পরিবার। গত আড়াই মাসে কোনো টাকাই দেশে পাঠাতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে থাকা ভাইবোনরা তারা চায় আমি বাড়ি ফিরে যাই। তবে টিকিটের জন্য আমার কাছে টাকা নেই।”

প্রবাসী নাসিরউদ্দিন সেরেন (২৪) বলেন, “প্রতি বছরই ঈদে বন্ধুরা মিলে বেড়াতাম। এবার এই পরিবেশ নেই। কারন নিজেই বাচঁতে পারছিনা। আমাদের কাছে কোন খাবার কেনার  টাকা না থাকলেও ঘর ভাড়া দিতে হবে। আমরা কয়েক মাস ধরে ভাড়া দিতে পারিনি।”

একই কথা বলছেন, আহমদ আলী (২৭)। আলী লিংকন ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লিামা গ্রাজুয়েট করেছেন। আলী ২০১৮ সালে স্নাতক হওয়ার পরে, তিনি কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। পরিবতিতে অফিস ক্লিনার হিসাবে কাজ করছেন। তিনি অন্য ১১ জনের সাথে থাকেন। তাদের মধ্যে চারজন তরুণ শিক্ষার্থী। আহমদ বলেছিলেন, তিনি লকডাউনে থাকা যুবকদের বেচেঁ থাকার লড়াই করতে দেখেছেন। তাদের কিছু খন্ডকালীন চাকরি ছিল কিন্তু এখন কোনও কাজ, খাবার, অর্থ নেই, তাদের মানসিক অবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের অনলাইন ক্লাস করতে হয়। তবে তাদের কছে কোনো টাকা না থাকায়  তারা অনলাইন ক্লাশে মনোনিবেশ করতে পারছেন না।

পবিত্র মাহে রমজান শেষে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে আসে ঈদ আনন্দ। এই ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ঠিকে থাকার লড়াই করছে সবাই। মালয়েশিযায় বিদেশি কর্মীর সংখ্যা নিয়ে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি হিসেব অনুযায়ি প্রায় ১.৮ মিলিয়ন থেকে ৩.৩ মিলিয়ন। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে মোট বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন ৩.৪ মিলিয়ন থেকে ৫.৫ মিলিয়ন।

২০১৬ সালে একটি সংসদ আলোচনায় পাঁচজন মালয়েশিয়ার নাগরিকের বিপরিতে দু’জন বিদেশি কর্মী থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য থেকে দেখা গেছে,  বেশিরভাগ কর্মী ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে, তার পরে নেপাল এবং বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই পুরুষ। তাদের বেশিরভাগই, সেলংগরে কাজ করছেন, তারপরে জোহর ও সারাওয়াকে।

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

বাংলাদেশি কর্মীরা, মালয়েশিয়ায় টিকে থাকার লড়াই

প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মে ২০২০

মালয়েশিয়া প্রবাসী সোহেল মোল্লা। তার আট সহকর্মীসহ প্রতি বছর ঈদের সময় দেশে থাকা পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতেন।পাঠানো টাকা দিয়ে নতুন পোশাক কেনা হত। প্রবাসে থেকেও পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দে মেতে উঠতেন। কিন্তু এই বছর সেটা ঘটেনি। কারণ মহামারি করোনায় কর্মহীন অবস্থায় কোয়ারেন্টিনে থেকে এখনটিকে থাকার লড়াই করছেন তারা।

প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে গত আড়াই মাস ধরে কর্মহীন অবস্থায় নিজেদের খাওয়ার টাকাই পকেটে নেই। চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের। সোহেল বলছিলেন, লকডাউনের প্রথম দিকে নিয়োগকর্তা ৫০০ রিঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং কিছু খাবার দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে  ৫০০ রিঙ্গিত  তাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে।

সোহেল বলছিলেন, “সাধারণত ঈদে আমরা বিরিয়ানি রান্না করি, পোলাও, রুটি রান্না করি এবং আমাদের প্রিয় মিষ্টি শেমাই তৈরি করি । এই বছর কিছুই করা হয়নি।”

সোহেল ও তার বন্ধুরা পেটালিং জায়ার একটি সাবলেটে থাকেন, যা একসময় অফিস ছিল। তিনটি কক্ষেই তারা কয়জন মিলে থাকেন। রয়েছে একটি ছোট রান্নাঘর। বিকেলে, কক্ষগুলি অত্যন্ত গরম হয়, যা রমজানের সময় খুব কষ্টে ছিলেন।
এখানে যারা রয়েছেন, বেশিরভাগ লোকই নির্মাণ কাজ করেন। যেহেতু সরকার সমস্ত নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে, কখন তারা কাজে ফিরতে পারে তা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তায় দিন পার করতে হচ্ছে। সোহেল বলেছিলেন, এ এলাকায় প্রায় ৫৫ জন অভিবাসী রয়েছেন এবং আরও দশজন বাংলাদেশিসহ  অন্য সাবলেটে নিয়ে যান।

আব্বাস (৩০) নয় বছর আগে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। আব্বাসের থাকার  জায়গাটি সোহেলের চেয়ে কিছুটা ভাল ।
আব্বাস বলেন, “মালয়েশিয়া আসার পর কিছুদিন পরে আমার বাবা মারা গেলেন। বড় হিসাবে, পরিবার এবং আমার চার ভাইবোনকে দেখাশোনা করার ভার এখন আমার উপর।”

আব্বাস বলছিলেন, “আমি গড়ে ১,৮০০ রিঙ্গিত উপার্জন করি এবং প্রতি মাসে ১,০০০ রিঙ্গিত বাড়ি পাঠাই। ঈদের সময় টাকা পাঠাতে পারিনি। কতইনা কষ্টে রয়েছে দেশে থাকা পরিবার। গত আড়াই মাসে কোনো টাকাই দেশে পাঠাতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে থাকা ভাইবোনরা তারা চায় আমি বাড়ি ফিরে যাই। তবে টিকিটের জন্য আমার কাছে টাকা নেই।”

প্রবাসী নাসিরউদ্দিন সেরেন (২৪) বলেন, “প্রতি বছরই ঈদে বন্ধুরা মিলে বেড়াতাম। এবার এই পরিবেশ নেই। কারন নিজেই বাচঁতে পারছিনা। আমাদের কাছে কোন খাবার কেনার  টাকা না থাকলেও ঘর ভাড়া দিতে হবে। আমরা কয়েক মাস ধরে ভাড়া দিতে পারিনি।”

একই কথা বলছেন, আহমদ আলী (২৭)। আলী লিংকন ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লিামা গ্রাজুয়েট করেছেন। আলী ২০১৮ সালে স্নাতক হওয়ার পরে, তিনি কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। পরিবতিতে অফিস ক্লিনার হিসাবে কাজ করছেন। তিনি অন্য ১১ জনের সাথে থাকেন। তাদের মধ্যে চারজন তরুণ শিক্ষার্থী। আহমদ বলেছিলেন, তিনি লকডাউনে থাকা যুবকদের বেচেঁ থাকার লড়াই করতে দেখেছেন। তাদের কিছু খন্ডকালীন চাকরি ছিল কিন্তু এখন কোনও কাজ, খাবার, অর্থ নেই, তাদের মানসিক অবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের অনলাইন ক্লাস করতে হয়। তবে তাদের কছে কোনো টাকা না থাকায়  তারা অনলাইন ক্লাশে মনোনিবেশ করতে পারছেন না।

পবিত্র মাহে রমজান শেষে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে আসে ঈদ আনন্দ। এই ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ঠিকে থাকার লড়াই করছে সবাই। মালয়েশিযায় বিদেশি কর্মীর সংখ্যা নিয়ে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি হিসেব অনুযায়ি প্রায় ১.৮ মিলিয়ন থেকে ৩.৩ মিলিয়ন। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে মোট বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন ৩.৪ মিলিয়ন থেকে ৫.৫ মিলিয়ন।

২০১৬ সালে একটি সংসদ আলোচনায় পাঁচজন মালয়েশিয়ার নাগরিকের বিপরিতে দু’জন বিদেশি কর্মী থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য থেকে দেখা গেছে,  বেশিরভাগ কর্মী ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে, তার পরে নেপাল এবং বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই পুরুষ। তাদের বেশিরভাগই, সেলংগরে কাজ করছেন, তারপরে জোহর ও সারাওয়াকে।