ঢাকা , শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বাজেটে অসামঞ্জস্য ও অস্বচ্ছতা আছে

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
  • ৭৫৭ পঠিত

প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত নিয়েই প্রশ্ন আছে। আছে অসামঞ্জস্য, অস্বচ্ছতাও। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কথা যদি বলি, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, এ খাতে বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বা জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হিসাবও আছে। অঙ্কটাও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সরকারি চাকরি আগে যাঁরা করেছেন, পেনশন তো তাঁদের দিতেই হবে। এ হিসাব এখানে দেখানো ঠিক নয়। পেনশন তো একজন সচিবও পান। তার মানে কি অবসরপ্রাপ্ত সচিব সামাজিক সুরক্ষার আওতায়? একই কথা খাটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ক্ষেত্রেও। সচিবেরা এখানেও টাকা রাখেন। এ দুই হিসাবই যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রকৃত বরাদ্দ আশাব্যঞ্জক নয়।

আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের টাকাকে ‘শিক্ষা খাত ও প্রযুক্তি’ নামে যুক্ত করে কেন দেখাচ্ছে, আমার বোধগম্য নয়। শিক্ষা খাতে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিক্ষার অংশটি থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্প ধরে মোট বাজেটে বরাদ্দের চিত্র বাড়িয়ে দেখানোর কোনো মানে নেই। শিক্ষা খাতে বাজেট বেশি বাড়ানো যাচ্ছে না, এটা একটা বাস্তবতা। সরকার আয়ের খাত বেশি বের করতে না পারায় শিক্ষা কেন, অনেক দরকারি খাতেই বেশি টাকা রাখতে পারছে না। তার অর্থ এই নয় যে এক খাতের টাকা অন্য খাতের সঙ্গে যোগ করে বড় করে দেখাতে হবে।

এবার আসি তাহলে স্বাস্থ্য খাতে। এ খাতে অর্থমন্ত্রী মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা দেখিয়ে বলেছেন, তা জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে অন্য মন্ত্রণালয়ের কিছু হিসাবসহ থোক বরাদ্দের ১০ হাজার কোটি টাকাও রয়েছে। যতটুকু দেখেছি, ১০ হাজার কোটি টাকা শুধু অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাতেই আছে, বাজেট বইয়ে উল্লেখ নেই। বাস্তবে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ তো ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রতিবছরই জিডিপির ১ শতাংশের নিচে থাকছে, এ দুর্নাম ঘোচানোর জন্যই হয়তো অর্থমন্ত্রী এবার তা ১ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছেন।

তবে সবচেয়ে বেঠিক কাজ হয়েছে কৃষি ভর্তুকির হিসাব দেখানোর ক্ষেত্রে। সার, ডিজেল ইত্যাদির জন্য প্রতিবারই কৃষি ভর্তুকি রাখা হয়। এটা দরকারও। এটাকে আবার কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে আলাদা করে দেখানোটা একদমই উচিত হয়নি। এটা তো দ্বৈত হিসাব হয়ে গেল। এতে তেমন কিছু ক্ষতি হয়ে যায়নি, কিন্তু সরকার যে বলছে ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠল। এটা বাদ দিয়ে প্রণোদনা জিডিপির কত অংশ, সেই হিসাব করতে হবে।

এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

বাজেটে অসামঞ্জস্য ও অস্বচ্ছতা আছে

প্রকাশিত : ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০

প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত নিয়েই প্রশ্ন আছে। আছে অসামঞ্জস্য, অস্বচ্ছতাও। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কথা যদি বলি, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, এ খাতে বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বা জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হিসাবও আছে। অঙ্কটাও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সরকারি চাকরি আগে যাঁরা করেছেন, পেনশন তো তাঁদের দিতেই হবে। এ হিসাব এখানে দেখানো ঠিক নয়। পেনশন তো একজন সচিবও পান। তার মানে কি অবসরপ্রাপ্ত সচিব সামাজিক সুরক্ষার আওতায়? একই কথা খাটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ক্ষেত্রেও। সচিবেরা এখানেও টাকা রাখেন। এ দুই হিসাবই যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রকৃত বরাদ্দ আশাব্যঞ্জক নয়।

আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের টাকাকে ‘শিক্ষা খাত ও প্রযুক্তি’ নামে যুক্ত করে কেন দেখাচ্ছে, আমার বোধগম্য নয়। শিক্ষা খাতে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিক্ষার অংশটি থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্প ধরে মোট বাজেটে বরাদ্দের চিত্র বাড়িয়ে দেখানোর কোনো মানে নেই। শিক্ষা খাতে বাজেট বেশি বাড়ানো যাচ্ছে না, এটা একটা বাস্তবতা। সরকার আয়ের খাত বেশি বের করতে না পারায় শিক্ষা কেন, অনেক দরকারি খাতেই বেশি টাকা রাখতে পারছে না। তার অর্থ এই নয় যে এক খাতের টাকা অন্য খাতের সঙ্গে যোগ করে বড় করে দেখাতে হবে।

এবার আসি তাহলে স্বাস্থ্য খাতে। এ খাতে অর্থমন্ত্রী মোট বরাদ্দ ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা দেখিয়ে বলেছেন, তা জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে অন্য মন্ত্রণালয়ের কিছু হিসাবসহ থোক বরাদ্দের ১০ হাজার কোটি টাকাও রয়েছে। যতটুকু দেখেছি, ১০ হাজার কোটি টাকা শুধু অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাতেই আছে, বাজেট বইয়ে উল্লেখ নেই। বাস্তবে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ তো ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রতিবছরই জিডিপির ১ শতাংশের নিচে থাকছে, এ দুর্নাম ঘোচানোর জন্যই হয়তো অর্থমন্ত্রী এবার তা ১ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছেন।

তবে সবচেয়ে বেঠিক কাজ হয়েছে কৃষি ভর্তুকির হিসাব দেখানোর ক্ষেত্রে। সার, ডিজেল ইত্যাদির জন্য প্রতিবারই কৃষি ভর্তুকি রাখা হয়। এটা দরকারও। এটাকে আবার কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে আলাদা করে দেখানোটা একদমই উচিত হয়নি। এটা তো দ্বৈত হিসাব হয়ে গেল। এতে তেমন কিছু ক্ষতি হয়ে যায়নি, কিন্তু সরকার যে বলছে ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠল। এটা বাদ দিয়ে প্রণোদনা জিডিপির কত অংশ, সেই হিসাব করতে হবে।

এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার