করোনার মতো ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেট দিতে হচ্ছে। করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা পুনরুদ্ধার বাজেট দেওয়া উচিত। এ জন্য মূল বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। এই ১৫ শতাংশের শিক্ষা বাজেটে যেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো তথ্যপ্রযুক্তির প্রকল্প ঢুকে না পড়ে। এটি হতে হবে শুধুই শিক্ষা বাজেট। এখনো শিক্ষা বাজেটের বরাদ্দ মূল বাজেটের ১১ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
করোনার প্রেক্ষাপটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। শিক্ষা কার্যক্রম পৌঁছাতে অনলাইন বা ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষা কার্যক্রম পৌঁছাচ্ছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট–সুবিধা নেই বললেই চলে। অনলাইন বা ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক সংস্কার আনতে হবে। সব শিক্ষার্থী যেন ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। করোনাকালের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
শিক্ষার বাজেটকে শুধু শিক্ষাকে কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিও বাজেট চিন্তায় আনতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ বৃত্তি দেওয়া হয়, তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পরিসরও বাড়াতে হবে। বৃত্তি কার্যক্রমকে সর্বজনীন করা প্রয়োজন, যাতে সুবিধাবঞ্চিত সবাই বৃত্তি পায়। এখন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘মিল বা খাবার বিতরণ কর্মসূচি’ আছে, সেটাও সর্বজনীন করা দরকার।
গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের কথাও চিন্তা করতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত নয়, এমন শিক্ষকদের বেতন–ভাতা যাতে ঠিকমতো পায়, সেটি নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হবে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়বে। সার্বিকভাবে শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর দিতে হবে।
করোনাকালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা বাড়বে। বাল্যবিবাহ ও শিশু প্রসূতি মাতা, শিশুশ্রম এবং অপুষ্টি—মূলত এই তিনটি কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার বাড়বে। তাই শিক্ষা বাজেটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির দিকেও জোর দিতে হবে। এসব খাতে বরাদ্দ দিতে গেলে টাকা কোথা থেকে আসবে—এমন প্রশ্ন আসতে পারে। আমার মত হলো এক বছরের জন্য মেগা প্রকল্পে কম খরচ করা যেতে পারে। ওই টাকা শিক্ষা খাতে খরচ করা যেতে পারে। জীবন–জীবিকা ও মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে এর ফল মিলবেই। আর বিনিয়োগ না করলে নেতিবাচক ফলও পাব।