পাবনার বেড়া উপজেলার দরিদ্র তাঁতশ্রমিক বাদশা মিয়া। সবার কাছে তাঁর পরিচিতি ‘সাইকেল বাদশা’ নামে। কাজের ফাঁকে অবসর পেলেই শাকসবজি, ফলের বীজ আর গাছের চারা নিয়ে সাইকেলে করে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বিনা মূল্যে বিতরণ করেন এসব। করোনার এই মহামারির সময়ও থেমে নেই বাদশার সাইকেল। মাস্ক ও সাবান বিতরণের পাশাপাশি তিনি সচেতন করছেন মানুষকে।
বেড়ার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া। তাঁতশ্রমিকের কাজ করে তাঁর দৈনিক আয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এই আয় দিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করেন। সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মধ্যে শাকসবজি, ফলের বীজ ও গাছের চারা বিনা মূল্যে বিতরণ করেন। পাশাপাশি নানা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করেন।
প্রথম আলোয় ২০১৭ সালের ৮ মে ‘বাদশার সাইকেল চলছে’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বাদশা মিয়ার ব্যতিক্রম এই উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি ওই সময় ব্যাপক আলোচিত হয়। এরপর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে হাজির করা হয় বাদশাকে। তারপর থেকেই তিনি ‘সাইকেল বাদশা’ নামে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠেন। বাদশাও দ্বিগুণ উৎসাহে তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গায়। কিন্তু সেভাবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি। তাই এবার বাদশা নেমেছেন করোনা মোকাবিলায়।
পাবনার বেড়ার তাঁতশ্রমিক বাদশা মিয়া এখন বিনা মূল্যে বিতরণ করছেন মাস্ক ও সাবান। সচেতন করছেন মানুষকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোকজনের মধ্যে মাস্ক ও সাবান বিতরণের অর্থ সংগ্রহের জন্য বাদশা মিয়াকে প্রথমদিকে কিছুটা সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে কিছু মানুষ এগিয়ে আসায় এখন সংকট কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। তিনি সাইকেল নিয়ে বেড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন। তাঁর সাইকেলে বরাবরের মতো বিতরণের জন্য থাকছে শাকসবজির বীজ ও গাছের চারা। এর সঙ্গে থাকছে মাস্ক ও সাবান। কারও মুখে মাস্ক না থাকলে তিনি মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়ার সময় বিতরণ করছেন সাবানও।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে বাদশা মিয়া বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ব্যাপারে প্রত্যন্ত এলাকার অনেকেই এখনও উদাসীন। তাঁদের বুঝিয়ে
মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ায় অভ্যস্ত করার চেষ্টা করছি।’
হাটুরিয়া-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম হোসেন বলেন, বাদশার মন অনেক বড়। বছরের পর বছর ধরে তিনি তাঁর সামান্য আয় থেকে টাকা বাঁচিয়ে অন্যের বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদনে সহায়তা করে আসছেন। আর এখন তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে
সাবান ও মাস্ক বিতরণ করছেন, করোনা সম্পর্কে সচেতন করছেন।