বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের আকস্মিক মৃত্যু, এটি আত্মহত্যা নাকি খুন? গতকাল খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পরই এ প্রশ্নটা সামনে এসে দাঁড়ায়। সুশান্তের পরিবারের পক্ষে এই এ ঘটনাকে আত্মহত্যা নয় বলেই দাবি করা হয়েছে। দাবি, সন্দেহ, ধারণা—এই সবের মাঝেই অবশেষে সামনে এল সুশান্ত সিং রাজপুতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। সেখানে বলা হচ্ছে ঝুলে পড়ার কারণে দম বন্ধ হয়েই মারা গেছেন ৩৪ বছরের এ তরুণ।
গতকাল রোববার সুশান্তের বান্দ্রার বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ, মিলেছে প্রেসক্রিপশন। তবে মেলেনি কোনো সুইসাইড নোট।
নিয়ম অনুযায়ী সুশান্তের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল মুম্বাইয়ের ড. আরএন কুপার মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে। আজ সোমবার সেখানকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভিসহ বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম। হাসপাতালের রিপোর্ট বলছে, ঝুলে থাকায় অ্যাসফিক্সিয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে অভিনেতার। আমৃত্যু দড়িতে ঝুলে ছিলেন তিনি। যে চিকিৎসক সুশান্তের ময়নাতদন্ত করেছেন, তিনি জানিয়েছেন, সুশান্তের শরীরে কোনো ড্রাগ বা বিষ রয়েছে কি না, সেটি জেজে হাসপাতালে পরীক্ষা করা হবে। এমনিতে মুম্বাই পুলিশ ভিসেরার নমুনা সংরক্ষণ করে রেখেছে রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য। সেসব নমুনা ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে।
সুশান্তের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে। ছবি: ইনস্টাগ্রামপ্রসঙ্গত, শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে তার থেকে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে বা মারাও যেতে পারে। এই অবস্থাকেই বলে অ্যাসফিক্সিয়া।
এই প্রতিবেদনের সূত্রে মুম্বাই পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বলছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে অভিনেতার পরিবার এটি মানতে নারাজ। পরিবারের পক্ষে তাঁর মামা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘এটা হত্যা।’ মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি টিম ইতিমধ্যেই সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। সুশান্তের মামা আরসি সিং বলেন, ‘এটি কোনোভাবেই মানতে পারছি না যে আমাদের সুশান্ত আত্মহত্যা করেছে। এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে। ওকে খুন করা হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে তাঁর আরও অভিযোগ, সুশান্তের সাবেক ম্যানেজার দিশা সাইলানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হলেও ওটা আসলে আত্মহত্যা নয়। দিশাকেও খুন করা হয়েছিল। সুশান্তের দূর সম্পর্কের আত্মীয় সাবেক সাংসদ লাভলি আনন্দও সুশান্তের মৃত্যুতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ‘গভীরে গিয়ে এর তদন্ত হওয়া উচিত। কয়েক দিন আগেই সুশান্তের ম্যানেজার দিশা সালিয়ান আত্মহত্যা করেন। এবার আমাদের বাচ্চাটা আত্মহত্যা করল। এমন কাকতালীয় হতে পারে না, বিশ্বাস করি না।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
রোববার সকালে সুশান্তের বাড়ির পরিচারকের ফোন পায় মুম্বাই পুলিশ। বাড়িতে এসে অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন তারা। দ্রুত খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। শোকবিহ্বল বিনোদন, ক্রীড়া থেকে শুরু করে ভারত এমনকি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অনুরাগীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় সুশান্তের নানা ছবি। তবে করুণ কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে সুশান্তকে আর পাওয়া যাবে না কোন আয়োজনে, মিলবে না নতুন কোনো সিনেমায়। মুম্বাইয়ে আজই হবে সুশান্ত সিংয়ের শেষযাত্রা, শেষকৃত্য। পটনা থেকে মুম্বাই এসেছে বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। প্রথমে সুশান্তর দেহ পটনায় নিয়ে যাওয়ার কথা হলেও পরে সিদ্ধান্ত বদল হয়। যে শহরে তাঁর উত্থান, সেই মুম্বাইতেই শেষকৃত্য হোক, এমনটাই চেয়েছেন সুশান্তর বন্ধু ও ঘনিষ্ঠরা।
১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া সুশান্ত পাঁচ ভাইবোনের ভেতর সবার ছোট। তাঁর বড় চার বোন আছে। ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সুশান্তর। একই বছরে মুক্তি পায় ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’। ২০১৬ সালে ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ মুক্তির পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুশান্তকে।