কাঁচামাল আমদানির সময় অগ্রিম কর কেটে রাখা দেশের করপোরেটগুলোর জন্য এক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, অগ্রিম করের কারণে বড় কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে যায়। এতে কোম্পানি পরিচালন মূলধনের সংকটে পড়ে।
করপোরেটদের এখন দুভাবে অগ্রিম কর দিতে হচ্ছে। প্রথমত, কাঁচামাল আমদানিকালে তাদের কাছ থেকে সাধারণভাবে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কেটে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) হিসেবে কেটে রাখা হয় ৩ থেকে ৫ শতাংশ। খাতভেদে এই হারে কিছু কিছু পার্থক্য আছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘অগ্রিম আয়কর শুধু আমাদের অবাক করেছে। প্রথমে চলতি বছরের বাজেটে এই অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তা অসমন্বয়যোগ্য বলে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বাস্তবায়ন করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে অগ্রিম আয়কর চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এমনটি আমাদের জানা নেই।’
আলমগীর কবির বলেন, কোনো কোম্পানি মুনাফা করুক বা লোকসান করুক, তাকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতেই হবে। এটা আসলে কেউ বেঁধে দিতে পারে না। একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় এটা থাকা উচিত নয়।
আলমগীর কবির আরও বলেন, ‘সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে অনেক দেনদরবারের পরে সিমেন্ট খাতে অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আমরা চাই এটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক। নিদেনপক্ষে এটি সমন্বয়যোগ্য কর হিসেবে ঘোষণা করা হোক।’করোনাকালে বাজেটে অগ্রিম করে ছাড় চায় করপোরেটরা
তারা বলছে, অগ্রিম কর কোম্পানিতে নগদ টাকার সংকট বাড়ায়
বাজেট উপলক্ষে বেশ কিছু করপোরেটের কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাদের বেশির ভাগই এ ক্ষেত্রে অগ্রিম কর তুলে নেওয়ার দাবির কথা জানায়।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) অগ্রিম করে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছে।
সংগঠনটির প্রস্তাবে শিল্পের মৌলিক কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। গত মে মাসে অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে এফবিসিসিআই শিল্পের কাঁচামালের ওপর থেকে অগ্রিম কর (এটি) পুরোপুরি তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, অন্য ক্ষেত্রে অগ্রিম কর যথাসময়ে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। অনেক অগ্রিম কর এখনো সমন্বয় হয়নি।
এফবিসিসিআই বলেছে, উৎসে কর ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। এতে ক্রেতার ওপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে।
ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বিএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘ইস্পাত খাতের বড় সমস্যা হলো কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর কেটে রাখা। এতে বিনিয়োগের আগেই বড় কারখানাগুলোর এক থেকে দেড় শ কোটি টাকা আটকে যাচ্ছে। বাজেটে যেন এই অগ্রিম কর স্থগিত করা হয়, সেটিই প্রত্যাশা।’
করপোরেটগুলো করোনার নেতিবাচক প্রভাব সামাল দেওয়া এবং বিনিয়োগ কর্মসংস্থানের স্বার্থে করপোরেট কর কমানো, ন্যূনতম কর কমানো, কাঁচামালের ওপর কর কমানো এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ছাড়ও দাবি করেছে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমরা ভোজ্যতেলের তিন স্তরের কর এক স্তরে দিতে চাই, যেটা আগে ছিল। এতে ব্যবসা সহজ হবে এবং মানুষও সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্যতেল পাবে।’
ইউনিলিভার বাংলাদেশের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস শামীমা আক্তার বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকে এই করোনা পরিস্থিতিতে জীবিকা হারাচ্ছেন। আমরা আশা করব, সরকার বাজেটে ছোট ছোট প্যাকেটের পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক তুলে নেবেন। এতে সাধারণ মানুষ স্বল্প মূল্যে পণ্য কিনতে পারবে।’