ঢাকা , শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সাড়া মেলে না, তবু বারবার সুযোগ

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০
  • ৮৭৯ পঠিত

অর্থনীতিতে কালোটাকা একটি বড় ইস্যু। ছোট চাকরি করলেও বিলাসী জীবনযাপন করেন অনেকে। ছেলেমেয়েদের অভিজাত স্কুলে পড়ান, বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন। দামি গাড়ি চালান। ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থসম্পদ নামে–বেনামে নানা পন্থায় লুকিয়ে রাখেন তাঁরা। সরকারও মাঝেমধ্যে তাঁদের সেই টাকা মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ‘সাদা’ করার সুযোগ দেয়। কখনো ঢালাও সুযোগ, কখনো শর্ত সাপেক্ষে সুযোগ। কিন্তু সরকারের দেওয়া এ ধরনের সুযোগকে খুব বেশি কাজে লাগান না কালোটাকার মালিকেরা। 

তারপরও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক বছরের জন্য ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন। এবার আর কোনো শর্ত নয়। কারও কাছে নগদ টাকা থাকলেও তা সাদা করা যাবে। এত দিন যে ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে ‘বালিশের নিচে’ নগদ টাকা পাওয়া যেত, সেই টাকাও সাদা হবে। ব্যাংকে থাকা টাকার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা অবৈধ টাকাও ঘোষণায় আনা যাবে। শুধু বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে ওই টাকা প্রদর্শন করে ১০ শতাংশ কর দিলেই চলবে। এবার ঢালাও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে
এতে ‘বালিশের নিচে’ রাখা টাকাও সাদা করা যাবে
এ নিয়ে নানা মহল প্রশ্ন তুলেছে

কেউ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো শেয়ারে কালোটাকা বিনিয়োগ করতে চাইলে তা কমপক্ষে তিন বছরের জন্য করতে হবে। কারণ, তিন বছরের লক ইন বা বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার শর্তে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এত দিন ফ্ল্যাট কেনায় এই সুযোগ ছিল। এখন নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে জমি কেনাতেও এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। 

এবার কেউ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাঁকে কোনো প্রশ্নও করবেই না, সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষও টাকার উৎস জানতে চাইবে না। এমন সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের মালিকেরা। এবার তাঁদের জন্য সেই ‘সুবর্ণ সুযোগ’। 

জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এবার সরকার অনেকটা বেপরোয়াভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত সরকার স্বীকার করে নিল, অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা রয়েছে।

এবার করোনা পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের স্বার্থে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রীর মতে, ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি টাইম রিকয়্যারস এক্সট্রা অর্ডিনারি মেজারস’ অর্থাৎ বিশেষ সময়ে বিশেষ উদ্যোগের দরকার। অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং রাজস্ব বাড়বে। 

কিন্তু বাস্তবে এমন সুযোগে কখনোই খুব বেশি সাড়া মেলেনি। প্রায় সব সরকারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৫ বারের মতো কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি সাদা করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল। 

কেন কালোটাকা সাদা হয় না, এ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হান বলেন, কালোটাকার মালিকেরা হয়তো মনে করেন, টাকা সাদা করার চেয়ে বিদেশে পাচার করলে বেশি লাভ। এ ছাড়া যদি কখনো তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাহলে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার শঙ্কাও থাকে। 

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলে সৎ করদাতাদের প্রতি একধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। কারণ, একজন করদাতা বৈধভাবে ২০ লাখ টাকার করযোগ্য আয় করলে তাঁকে সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর একজন ব্যক্তি যদি দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত ২০ লাখ টাকা এখন সরকারের দেওয়া সুযোগে সাদা করেন, তাহলে তাঁকে মাত্র ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ ২ লাখ টাকা কর দিয়েই ২০ লাখ টাকা সাদা করে ফেলতে পারবেন তিনি। তার মানে, সৎ করদাতাদের চেয়ে ৯৫ হাজার টাকা কম কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করে ফেলতে পারবেন ওই টাকার মালিক। তাই অর্থনীতিবিদ ও ভালো ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন সব সময়। তাঁদের মতে, এ ধরনের সুযোগ সৎ করদাতাদের জন্য পুরস্কারের বদলে শাস্তিস্বরূপ।

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

সাড়া মেলে না, তবু বারবার সুযোগ

প্রকাশিত : ১১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০

অর্থনীতিতে কালোটাকা একটি বড় ইস্যু। ছোট চাকরি করলেও বিলাসী জীবনযাপন করেন অনেকে। ছেলেমেয়েদের অভিজাত স্কুলে পড়ান, বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন। দামি গাড়ি চালান। ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থসম্পদ নামে–বেনামে নানা পন্থায় লুকিয়ে রাখেন তাঁরা। সরকারও মাঝেমধ্যে তাঁদের সেই টাকা মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ‘সাদা’ করার সুযোগ দেয়। কখনো ঢালাও সুযোগ, কখনো শর্ত সাপেক্ষে সুযোগ। কিন্তু সরকারের দেওয়া এ ধরনের সুযোগকে খুব বেশি কাজে লাগান না কালোটাকার মালিকেরা। 

তারপরও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক বছরের জন্য ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন। এবার আর কোনো শর্ত নয়। কারও কাছে নগদ টাকা থাকলেও তা সাদা করা যাবে। এত দিন যে ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে ‘বালিশের নিচে’ নগদ টাকা পাওয়া যেত, সেই টাকাও সাদা হবে। ব্যাংকে থাকা টাকার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা অবৈধ টাকাও ঘোষণায় আনা যাবে। শুধু বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে ওই টাকা প্রদর্শন করে ১০ শতাংশ কর দিলেই চলবে। এবার ঢালাও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে
এতে ‘বালিশের নিচে’ রাখা টাকাও সাদা করা যাবে
এ নিয়ে নানা মহল প্রশ্ন তুলেছে

কেউ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো শেয়ারে কালোটাকা বিনিয়োগ করতে চাইলে তা কমপক্ষে তিন বছরের জন্য করতে হবে। কারণ, তিন বছরের লক ইন বা বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার শর্তে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এত দিন ফ্ল্যাট কেনায় এই সুযোগ ছিল। এখন নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে জমি কেনাতেও এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। 

এবার কেউ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাঁকে কোনো প্রশ্নও করবেই না, সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষও টাকার উৎস জানতে চাইবে না। এমন সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের মালিকেরা। এবার তাঁদের জন্য সেই ‘সুবর্ণ সুযোগ’। 

জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এবার সরকার অনেকটা বেপরোয়াভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত সরকার স্বীকার করে নিল, অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা রয়েছে।

এবার করোনা পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের স্বার্থে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রীর মতে, ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি টাইম রিকয়্যারস এক্সট্রা অর্ডিনারি মেজারস’ অর্থাৎ বিশেষ সময়ে বিশেষ উদ্যোগের দরকার। অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং রাজস্ব বাড়বে। 

কিন্তু বাস্তবে এমন সুযোগে কখনোই খুব বেশি সাড়া মেলেনি। প্রায় সব সরকারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৫ বারের মতো কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি সাদা করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল। 

কেন কালোটাকা সাদা হয় না, এ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হান বলেন, কালোটাকার মালিকেরা হয়তো মনে করেন, টাকা সাদা করার চেয়ে বিদেশে পাচার করলে বেশি লাভ। এ ছাড়া যদি কখনো তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাহলে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার শঙ্কাও থাকে। 

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলে সৎ করদাতাদের প্রতি একধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। কারণ, একজন করদাতা বৈধভাবে ২০ লাখ টাকার করযোগ্য আয় করলে তাঁকে সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর একজন ব্যক্তি যদি দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত ২০ লাখ টাকা এখন সরকারের দেওয়া সুযোগে সাদা করেন, তাহলে তাঁকে মাত্র ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ ২ লাখ টাকা কর দিয়েই ২০ লাখ টাকা সাদা করে ফেলতে পারবেন তিনি। তার মানে, সৎ করদাতাদের চেয়ে ৯৫ হাজার টাকা কম কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করে ফেলতে পারবেন ওই টাকার মালিক। তাই অর্থনীতিবিদ ও ভালো ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন সব সময়। তাঁদের মতে, এ ধরনের সুযোগ সৎ করদাতাদের জন্য পুরস্কারের বদলে শাস্তিস্বরূপ।