ঢাকা , শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

করোনারোগীকে ‘প্লাজমা’ দিলেন ভাইবোন

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০
  • ৭১২ পঠিত

এই করোনাকালে পজিটিভ ও নেগেটিভ শব্দের পাশাপাশি এখন আরেকটি শব্দ খুব প্রচলিত—প্লাজমা। ফেসবুকে এখন প্লাজমা চেয়ে প্রচুর পোস্ট দেখা যায়। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত জটিল অবস্থার রোগীর স্বজনদের ছোটাছুটি চলে প্লাজমা সংগ্রহে। করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি অনেকের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন। মাহপারা তাসনীম ও মাশরুর তাহমিন—এই বোন আর ভাইও এক করোনারোগীকে প্লাজমা দিয়েছেন।

করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিরা শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় আক্রান্ত অন্য রোগীকে প্লাজমা দেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, আশাব্যঞ্জক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীদের সারাতে প্লাজমা থেরাপির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সরকারের করা কারিগরি উপকমিটির প্রধান অধ্যাপক এম এ খান সম্প্রতি প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘রক্তের জলীয় অংশকে প্লাজমা বলে। কোনো ব্যক্তি ভাইরাস–ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে তার শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়। ফলে তার রক্তে এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে ও এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় এই অ্যান্টিবডি রয়েছে, যা সংগ্রহ করে কোভিড আক্রান্ত রোগীর শরীরে দিলে সাময়িক প্যাসিভ ইমিউনিটি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি সার্চ করোনা-২ ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে এবং রোগী সুস্থ হতে থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহপারা তাসনীমের মা–বাবা দুজনেই চিকিৎসক। বাবা মশিউর রহমান হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক। মা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক হেলেনা আফরিন। মাহপারা, তাঁর ভাই ‘এ’ লেভেলে পড়ুয়া মাশরুর তাহমিন ও মা হেলেনা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। ২৭ মে এই ভাইবোন এক চিকিৎসককে প্লাজমা দেন।

মাহপারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদেরকে যখন বলেছে যে একজন অসুস্থ, আমাদের প্লাজমাটা ওনার কাজে লাগবে। তখন মনে হলো যে এটা তো আমাদের দায়িত্ব। আমাদের জন্য এটা একটা সুযোগ যে কাউকে সাহায্য করতে পারছি। যাঁরা শারীরিকভাবে সক্ষম, সবার উচিত প্লাজমা দিয়ে সাহায্য করা।’ তিনি জানান, যখন আক্রান্ত ছিলেন, তখন খারাপ একটা সময় গেছে। ভাই আর তিনি সুস্থ হয়ে গেলেও তাঁদের মায়ের সুস্থ হতে সময় লেগেছে। তবে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে এবং আরেকজনকে একই রোগ থেকে সেরে ওঠায় সাহায্য করতে পেরে মাহপারার পরিবার খুশি।

মাহপারা ও মাশরুরের বাবা মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা ছোট হয়েও এগিয়ে এসেছে। সাহস করেছে। মানুষের ভীতিটা কাটুক। যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁরাও এগিয়ে আসুন। কারও জন্য কিছু করতে পারা অনেক বড় ব্যাপার। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাই যদি এগিয়ে না আসে, বিপদ বাড়বেই। এখন পর্যন্ত প্লাজমা চিকিৎসা কিছুটা কার্যকর দেখা যাচ্ছে।’

ছেলেমেয়ের প্লাজমা একজন গুরুতর রোগীর জন্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মশিউর রহমান বলেন, দুজনের প্লাজমা আইসিউতে নিয়ে রোগীকে দেওয়া হয়েছে। এরপর জানতে পারেন যে রোগীর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মশিউর রহমানের পরিবার সাহসের সঙ্গে নিজেদের বিপদ সামলেছে। এখন অন্যের বিপদেও এগিয়ে এসেছে।

জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

করোনারোগীকে ‘প্লাজমা’ দিলেন ভাইবোন

প্রকাশিত : ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০

এই করোনাকালে পজিটিভ ও নেগেটিভ শব্দের পাশাপাশি এখন আরেকটি শব্দ খুব প্রচলিত—প্লাজমা। ফেসবুকে এখন প্লাজমা চেয়ে প্রচুর পোস্ট দেখা যায়। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত জটিল অবস্থার রোগীর স্বজনদের ছোটাছুটি চলে প্লাজমা সংগ্রহে। করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি অনেকের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন। মাহপারা তাসনীম ও মাশরুর তাহমিন—এই বোন আর ভাইও এক করোনারোগীকে প্লাজমা দিয়েছেন।

করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিরা শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় আক্রান্ত অন্য রোগীকে প্লাজমা দেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, আশাব্যঞ্জক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীদের সারাতে প্লাজমা থেরাপির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সরকারের করা কারিগরি উপকমিটির প্রধান অধ্যাপক এম এ খান সম্প্রতি প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘রক্তের জলীয় অংশকে প্লাজমা বলে। কোনো ব্যক্তি ভাইরাস–ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে তার শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়। ফলে তার রক্তে এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে ও এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় এই অ্যান্টিবডি রয়েছে, যা সংগ্রহ করে কোভিড আক্রান্ত রোগীর শরীরে দিলে সাময়িক প্যাসিভ ইমিউনিটি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি সার্চ করোনা-২ ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে এবং রোগী সুস্থ হতে থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহপারা তাসনীমের মা–বাবা দুজনেই চিকিৎসক। বাবা মশিউর রহমান হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক। মা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক হেলেনা আফরিন। মাহপারা, তাঁর ভাই ‘এ’ লেভেলে পড়ুয়া মাশরুর তাহমিন ও মা হেলেনা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। ২৭ মে এই ভাইবোন এক চিকিৎসককে প্লাজমা দেন।

মাহপারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদেরকে যখন বলেছে যে একজন অসুস্থ, আমাদের প্লাজমাটা ওনার কাজে লাগবে। তখন মনে হলো যে এটা তো আমাদের দায়িত্ব। আমাদের জন্য এটা একটা সুযোগ যে কাউকে সাহায্য করতে পারছি। যাঁরা শারীরিকভাবে সক্ষম, সবার উচিত প্লাজমা দিয়ে সাহায্য করা।’ তিনি জানান, যখন আক্রান্ত ছিলেন, তখন খারাপ একটা সময় গেছে। ভাই আর তিনি সুস্থ হয়ে গেলেও তাঁদের মায়ের সুস্থ হতে সময় লেগেছে। তবে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে এবং আরেকজনকে একই রোগ থেকে সেরে ওঠায় সাহায্য করতে পেরে মাহপারার পরিবার খুশি।

মাহপারা ও মাশরুরের বাবা মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা ছোট হয়েও এগিয়ে এসেছে। সাহস করেছে। মানুষের ভীতিটা কাটুক। যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁরাও এগিয়ে আসুন। কারও জন্য কিছু করতে পারা অনেক বড় ব্যাপার। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাই যদি এগিয়ে না আসে, বিপদ বাড়বেই। এখন পর্যন্ত প্লাজমা চিকিৎসা কিছুটা কার্যকর দেখা যাচ্ছে।’

ছেলেমেয়ের প্লাজমা একজন গুরুতর রোগীর জন্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মশিউর রহমান বলেন, দুজনের প্লাজমা আইসিউতে নিয়ে রোগীকে দেওয়া হয়েছে। এরপর জানতে পারেন যে রোগীর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মশিউর রহমানের পরিবার সাহসের সঙ্গে নিজেদের বিপদ সামলেছে। এখন অন্যের বিপদেও এগিয়ে এসেছে।