দেশের কুটির শিল্প ও এসএমই খাতে ১ কোটির বেশি মানুষ কাজ করছে। কোভিডের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার এই খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজও ঘোষণা করেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এই খাতে ঋণ দিতে বিশেষ আগ্রহী নয়। অন্যদিকে এই অর্থায়নের ৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা হলেও অনেকে এই তথ্য জানেনও না। ফলে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার বড় অংশই এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি।
শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় প্রথম আলো ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘এসএমই ব্যবসার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন।
আজ শনিবার বিশ্ব এসএমই দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো ও আইডিএলসি যৌথভাবে ‘এসএমই ব্যবসার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক তিন পর্বের এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে আজ নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আজ রাত নয়টায় প্রথম আলো অনলাইন এবং প্রথম আলো ও আইডিএলসির ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচার হবে আজকের আলোচনাটি।
আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক লীলা রশিদ, আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ।
আলোচকেরা সবাই একটি ব্যাপারে একমত পোষণ করেন যে, করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাত। অথচ এই খাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান। ফলে অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে হলে এই খাতকে টিকিয়ে রাখার কোনো বিকল্প নেই।
বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে ৭৮ লাখ সিএসএমই প্রতিষ্ঠান আছে। এরা দেশব্যাপী বিস্তৃত। এদের অনেকেই অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যবসা করছে। ফলে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ করে না অনেকেই। তবে এদের জন্য বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অঙ্কটা বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন নাজনীন আহমেদ।
এসএমই খাত সংশ্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে নাজনীন আহমেদ বলেন, যাদের চার লাখ টাকা দরকার, তাদের এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এতে তাদের চাহিদা মিটছে না।
এদিকে, ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে আইডিএলসি ফাইন্যান্স এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা কীভাবে এই ব্যাপারে আগ্রহী হলো এবং অন্যদের কী করা উচিত, সঞ্চালক শওকত হোসেনের এই প্রশ্নের জবাবে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আরিফ খান বলেন, ব্যাংকিং খাতে এটা শেখানো হয় যে ছোট ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবে মূল কথা হচ্ছে সুশাসন। আইডিএলসি ১৫ বছর আগে এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে। এতে খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। তাই সুশাসনই মূল কথা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৯ শতাংশ সুদ হারের কারণে অনেক ব্যাংকই এসএমই খাতে ঋণ দিতে পারছে না বলে দাবি করছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক লীলা রশিদ বলেন, এই ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা। রাখঢাক করে লাভ হবে না। সমস্যারও সমাধান হবে না। সমস্যার সমাধান করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে।