করোনা মহামারিতে চলচ্চিত্রের সংকট কাটাতে ১০০ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন প্রযোজকেরা। তথ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সেই চিঠিতে একে আপৎকালীন প্রণোদনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারও চলচ্চিত্রশিল্পের সংকট দূর করতে যথেষ্ট আন্তরিক বলে দাবি করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। কিন্তু এই প্রণোদনা কারা পাবেন?
এই মহামারি শুরুর অনেক বছর আগে থেকেই সংকটে আছে ঢালিউড। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। করোনার পর আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহ চিরতরে বন্ধ হতে পারে। এদিকে সময়মতো শুটিং শেষ করতে না পেরে এবং ছবি মুক্তি না দিতে পেরে প্রযোজকেরা আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীরা। চলচ্চিত্রকে চাঙা করতে তাই সরকারের কাছে সিনেমা বানানোর প্রণোদনা চেয়েছেন প্রযোজকেরা। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতাকে পাওয়া গেলে সংকট কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে চলচ্চিত্র, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলচ্চিত্রে সংকট তো আগেও ছিল। সরকার ১০০ ছবিতে প্রণোদনা দিলে কি সংকট সত্যিই কাটবে? এমন প্রশ্নে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘করোনায় সংকট আরও করুণ হয়ে উঠেছে। সরকার যদি প্রণোদনা দেয়, তাহলে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায়ে অনেক প্রযোজক ছবি বানাতে আগ্রহী হবেন। এতে আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব। কর্মহীন শিল্পী-কলাকুশলীরা আনন্দে কাজে ফিরবেন। তা ছাড়া সরকার তো প্রতিটা সেক্টরে প্রণোদনা দিচ্ছে।’
কারা প্রণোদনা পেতে পারেন, এমন প্রশ্নে খোরশেদ আলম বলেন, ‘যাঁরা আগে সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন, যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ছবি হয়েছে, যাদের ছবির প্রতি দর্শকের আগ্রহ আছে, সরকার তাদের এই প্রণোদনা দিলে চলবে।’ সরকার প্রতিবছর চলচ্চিত্রে অনুদান দিয়ে থাকে। তবে করোনার এই সময়ের জন্য যে প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে অনুদানের ছবির কোনো সম্পর্ক নেই। এ প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম বলেন, ‘এফডিসি ঘরানার মেইন স্ট্রিম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের পরিচালক, প্রযোজক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে ১০০ চলচ্চিত্র বানানোর সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে প্রাথমিক সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর হবে।’
পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, আমাদের ছবি নির্মাণপ্রক্রিয়া এবং ছবিতে অনুদানের ক্ষেত্রে প্রচুর রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। ভালো ছবি নির্মাণে এটা বড় একটা সমস্যা। প্রণোদনার ব্যাপারে তাই দলীয় চিন্তার বাইরে যদি কিছু হয়, তবেই উদ্যোগটি সুন্দর হবে।’ তিনি এও বলেন, ‘প্রণোদনায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত, আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত, জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং একই সঙ্গে নতুন মেধাবী চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালকদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি শেষ কয়েক বছর ধরে যাঁরা সবচেয়ে সফলভাবে ছবি বানাতে পেরেছেন তাঁদেরও দেওয়া উচিত।’
শাকিব খান বলেন, ‘বিগত দুই বছরে যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ছবি বানিয়েছে, যাদের ছবির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ আছে, সরকারি প্রণোদনা যেন তারাই পায়। প্রণোদনা যেন দলীয় বিবেচনায় দেওয়া না হয়।’
নায়িকা মৌসুমী বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালককে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রণোদনা দিতেই হবে। সেসব প্রতিষ্ঠানকে, যারা গত এক-দুই বছরে চলচ্চিত্রে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল। বেশি ছবি বানিয়ে যাচ্ছিল। একই সঙ্গে যাদের ছবির শুটিং মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, ক্ষতির মধ্যে পড়েছে, তাদের বিষয়েও ভাবতে হবে।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, ‘তাঁরা যেহেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন, যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এটুকু বলব, চলচ্চিত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, কারণ এটাও ইন্ডাস্ট্রি। অন্য সব শিল্পের মতো করোনায় এই শিল্পও বড় সংকটে পড়েছে। যেকোনো শিল্পকেই সরকার বাঁচিয়ে রাখতে চায়। সরকারের পক্ষে যেভাবে সম্ভব, আমরা চেষ্টা করবে।’