ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আজ অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সেনা সাদ সাহেব রুজু করার পর দেওবন্দের মাসআলা খতম হয়ে গেছে : মাওলানা আরশাদ মাদানী চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের বয়ান পুলিশ সদস্যসহ বিশ্ব ইজতেমায় ৭ জনের মৃত্যু বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব দেশ কাজ করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র হত্যায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মন্ত্রী ও দুই মেয়র দেখলেন সেবা সংস্থাগুলোর গাফিলতির চিত্র

  • নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
  • ৮৬৯ পঠিত

জলাবদ্ধতার অবস্থা দেখতে আজ বুধবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরলেন ঢাকার দুই সিটির মেয়র। সেখানে দুই মেয়র প্রকাশ্যেই ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার গাফিলতির চিত্র তুলে ধরলেন। ওয়াসার খালের দায়িত্ব তাঁরা নিজেরা চাইলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বললেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। কিন্তু তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেই ফেললেন, ‘রাস্তায় পানি জমলে গালি আমাদের শুনতে হয়।’

হাতিরঝিল স্লুইসগেটে এসে দেখা গেল একই চিত্র। এই পথ দিয়ে পানিনিষ্কাশন বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রী ও মেয়র সেখানে আসার পর এটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এই স্লুইসগেট বন্ধ রাখার কারণে কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি ২৭–সহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন দক্ষিণের মেয়র।

গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সংকট সামনে রেখে আজ বুধবার সকালে সেবা সংস্থাগুলোকে নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সভায় জলাবদ্ধতা নিয়ে ওয়াসা ও পাউবো বলেছে, নদীতে পানির লেভেল বেশি থাকার কারণে শহর থেকে পানি বের করা যাচ্ছে না। এখন স্লুইসগেট খুলে দিলে শহরের ভেতরে পানি প্রবেশ করবে। তখন দক্ষিণের মেয়র বলেন, আউটলেট হয়ে ঠিকভাবে পানি বের হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্য সংস্থার দেওয়া তথ্য সঠিক নয় দাবি করে মন্ত্রীকে সরেজমিন পরিদর্শনের অনুরোধ জানান দক্ষিণের মেয়র।

এরপরই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও ডিএসসিসি মেয়র সরেজমিন পরিদর্শনে যান। একই দিন বিকেলে ডিএনসিসির মেয়রও মন্ত্রীকে নিয়ে দুটি জায়গা পরিদর্শন করেন।

কালুনগর এলাকা পরিদর্শনের পর মন্ত্রীকে নিয়ে হাতিরঝিল স্লুইসগেট পরিদর্শনে এসে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, ‘হাতিরঝিলের এই অংশ হয়ে পান্থপথের কালভার্ট দিয়ে পানিনিষ্কাশন হওয়ার কথা। কিন্তু এটা দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অন্তত বর্ষা মৌসুমে এটা খুলে দেওয়া উচিত। আমরা পরিদর্শনে আসার পর এটা খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সুন্দরভাবে পানি প্রবাহ হচ্ছে। পানি বের হওয়ার এ পথটি বন্ধ করে রাখার কারণে কাঁঠালবাগান থেকে আরম্ভ করে গ্রিন রোড, এমনকি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও রাপা প্লাজার সামনে পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’

এর আগে জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তাপস বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পাউবোর হলেও তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই দায়িত্ব করপোরেশনকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসিত হবে।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা দেখতে বিভিন্ন এলাকায় যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

এরপর স্থায়ী সরকারমন্ত্রী কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে যান। যেখানে আগে থেকেই উত্তর সিটির মেয়র করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। মেয়র সেখানে পৌঁছার পর ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম হাতিরঝিলে পানিপ্রবাহের সংযোগে ত্রুটি এবং অসংগতিগুলো মন্ত্রীকে অবহিত করেন।

এরপর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খালগুলো ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার। যদিও আমরা এসব বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু সবগুলো এখনো ঠিকভাবে পরিষ্কার হয়নি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’ তাই নিজেই মাঠে নেমে পরিদর্শনের জন্য বের হয়েছেন। মাঠে নেমে যা দেখেছেন, এর স্থায়ী সমাধানের কথাও বলেন তিনি।

প্রতিবছরই আশ্বাস দেওয়া হয় কিন্তু কাজ হয় না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা আরও ফরোয়ার্ড লুকিং হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করব। কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে, এ বিষয়ে দিন বলা ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহরের মানুষদের যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয়, এর সমাধান করার চেষ্টা করব।’

পরে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘রাস্তায় পানি জমলে গালি আমাদের শুনতে হয়। এ জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি ওয়াসার মালিকানাধীন খালগুলো আমাদের দিয়ে দিন। আমরা নগরবাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই আমরা যে কথা বলি, তার সঙ্গে কাজের মিল আছে।’ মেয়র আরও বলেন, ‘২৬টি জায়গাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এ ২৬টি জায়গাকে পর্যায়ক্রমে কাজ করব। কথা দিতে পারি, এই বর্ষায় ১০টি এলাকা আমরা ঠিক করে ফেলব।’

Tag :
জনপ্রিয়

রমজানে মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে ১৫ দিন, প্রাথমিক স্কুল ১০ দিন

মন্ত্রী ও দুই মেয়র দেখলেন সেবা সংস্থাগুলোর গাফিলতির চিত্র

প্রকাশিত : ১১:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

জলাবদ্ধতার অবস্থা দেখতে আজ বুধবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরলেন ঢাকার দুই সিটির মেয়র। সেখানে দুই মেয়র প্রকাশ্যেই ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার গাফিলতির চিত্র তুলে ধরলেন। ওয়াসার খালের দায়িত্ব তাঁরা নিজেরা চাইলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বললেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। কিন্তু তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেই ফেললেন, ‘রাস্তায় পানি জমলে গালি আমাদের শুনতে হয়।’

হাতিরঝিল স্লুইসগেটে এসে দেখা গেল একই চিত্র। এই পথ দিয়ে পানিনিষ্কাশন বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রী ও মেয়র সেখানে আসার পর এটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এই স্লুইসগেট বন্ধ রাখার কারণে কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি ২৭–সহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন দক্ষিণের মেয়র।

গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সংকট সামনে রেখে আজ বুধবার সকালে সেবা সংস্থাগুলোকে নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সভায় জলাবদ্ধতা নিয়ে ওয়াসা ও পাউবো বলেছে, নদীতে পানির লেভেল বেশি থাকার কারণে শহর থেকে পানি বের করা যাচ্ছে না। এখন স্লুইসগেট খুলে দিলে শহরের ভেতরে পানি প্রবেশ করবে। তখন দক্ষিণের মেয়র বলেন, আউটলেট হয়ে ঠিকভাবে পানি বের হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্য সংস্থার দেওয়া তথ্য সঠিক নয় দাবি করে মন্ত্রীকে সরেজমিন পরিদর্শনের অনুরোধ জানান দক্ষিণের মেয়র।

এরপরই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও ডিএসসিসি মেয়র সরেজমিন পরিদর্শনে যান। একই দিন বিকেলে ডিএনসিসির মেয়রও মন্ত্রীকে নিয়ে দুটি জায়গা পরিদর্শন করেন।

কালুনগর এলাকা পরিদর্শনের পর মন্ত্রীকে নিয়ে হাতিরঝিল স্লুইসগেট পরিদর্শনে এসে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, ‘হাতিরঝিলের এই অংশ হয়ে পান্থপথের কালভার্ট দিয়ে পানিনিষ্কাশন হওয়ার কথা। কিন্তু এটা দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অন্তত বর্ষা মৌসুমে এটা খুলে দেওয়া উচিত। আমরা পরিদর্শনে আসার পর এটা খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সুন্দরভাবে পানি প্রবাহ হচ্ছে। পানি বের হওয়ার এ পথটি বন্ধ করে রাখার কারণে কাঁঠালবাগান থেকে আরম্ভ করে গ্রিন রোড, এমনকি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও রাপা প্লাজার সামনে পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’

এর আগে জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তাপস বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পাউবোর হলেও তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই দায়িত্ব করপোরেশনকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসিত হবে।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা দেখতে বিভিন্ন এলাকায় যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২২ জুলাই। ছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

এরপর স্থায়ী সরকারমন্ত্রী কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে যান। যেখানে আগে থেকেই উত্তর সিটির মেয়র করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। মেয়র সেখানে পৌঁছার পর ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম হাতিরঝিলে পানিপ্রবাহের সংযোগে ত্রুটি এবং অসংগতিগুলো মন্ত্রীকে অবহিত করেন।

এরপর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খালগুলো ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার। যদিও আমরা এসব বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু সবগুলো এখনো ঠিকভাবে পরিষ্কার হয়নি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’ তাই নিজেই মাঠে নেমে পরিদর্শনের জন্য বের হয়েছেন। মাঠে নেমে যা দেখেছেন, এর স্থায়ী সমাধানের কথাও বলেন তিনি।

প্রতিবছরই আশ্বাস দেওয়া হয় কিন্তু কাজ হয় না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা আরও ফরোয়ার্ড লুকিং হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করব। কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে, এ বিষয়ে দিন বলা ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহরের মানুষদের যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয়, এর সমাধান করার চেষ্টা করব।’

পরে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘রাস্তায় পানি জমলে গালি আমাদের শুনতে হয়। এ জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি ওয়াসার মালিকানাধীন খালগুলো আমাদের দিয়ে দিন। আমরা নগরবাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই আমরা যে কথা বলি, তার সঙ্গে কাজের মিল আছে।’ মেয়র আরও বলেন, ‘২৬টি জায়গাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এ ২৬টি জায়গাকে পর্যায়ক্রমে কাজ করব। কথা দিতে পারি, এই বর্ষায় ১০টি এলাকা আমরা ঠিক করে ফেলব।’