স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা না-নিয়ে পড়ুয়াদের পাশ করানো যাবে না বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছিল, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পরীক্ষা নিতে হবে। সেই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়।
শুক্রবার বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছে, আগের পরীক্ষার ফল বা ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে কোনও পড়ুয়াকে পাশ করিয়ে দেওয়া যাবে না। ইউজিসি-র নির্দেশিকা মেনে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি থাকা সমস্ত পরীক্ষা শেষ করতে হবে। তবে কোথাও করোনা পরিস্থিতি খুব খারাপ হওয়ার কারণে কোনও রাজ্য ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে পরীক্ষা নিতে চাইলে তার জন্য ইউজিসি-র কাছে আবেদন জানাতে পারে।
শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পরে রাজ্য সরকারি সূত্র জানিয়েছে, যতটুকু না-করলে নয়, সে ভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে নয়, পুজোর আগে কোনও একটা সময়ে পরীক্ষা হবে। রাজ্যের অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলির সঙ্গে কথা বলে শিক্ষামন্ত্রী সাত দিনের মধ্যে ঠিক করবেন, অনলাইন ও অফলাইনে পরীক্ষা কী ভাবে হবে। অফলাইনে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ির কাছাকাছি পরীক্ষাকেন্দ্রের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ফলপ্রকাশ করেছে। সেগুলির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সিমেস্টার, হোম অ্যাসাইনমেন্ট-ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে ফল তৈরি করা হয়েছে। তার সঙ্গে ইউজিসির নির্দেশের বিরোধ নেই।
আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন কেন্দ্র ও ইউজিসি-কে বিঁধেছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘ইউজিসি-কে বলছি, কেন ছেলেমেয়েদের আপনারা বিপদে ফেলছেন?’’ প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে পরীক্ষা না-নেওয়ার নির্দেশিকা দিয়েছিল ইউজিসি। বহু রাজ্য সেই মতো পদক্ষেপ করে। পরে ১১ জুলাই নতুন নির্দেশিকা জারি করে ইউজিসি। তা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক এবং তা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।
শীর্ষ আদালতের রায়
• ইউজিসি গত ২৯ এপ্রিল যে নির্দেশিকা দিয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ৬ জুলাই নির্দেশিকা জারি করেছে। • আগের বছরের পরীক্ষা বা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে কাউকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করানোর নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে রাজ্যের নেই। • ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না মনে করলে রাজ্য সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য ইউজিসি-র কাছে আর্জি জানাতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান • সেপ্টেম্বরে নয়, পরীক্ষা হবে পুজোর আগে। • অনলাইন ও অফলাইনে কী ভাবে পরীক্ষা হবে, সাত দিনের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করবেন শিক্ষামন্ত্রী। • অফলাইন পরীক্ষাকেন্দ্র হবে পড়ুয়াদের বাড়ির কাছে। |
এ দিন সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন মমতা এবং বিজেপি-কে বিঁধে বলেছেন, ‘‘ভোটের সময় মানুষকে এর উত্তর দিতে পারবেন তো?’’ তাঁর দাবি, বহু রাজ্য এপ্রিলের নির্দেশিকা মেনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শংসাপত্র দিয়ে দিয়েছে।
ইউজিসি-র বক্তব্য ছিল, রাজ্য কোনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে পরীক্ষা না-নিয়ে ডিগ্রি দিয়ে দিতে বলতে পারে না। অতিমারির কারণ দেখিয়ে রাজ্য ইউজিসি-র নির্দেশিকা খারিজ করে দিতে পারে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
শীর্ষ আদালত এ দিন ইউজিসির নির্দেশিকাকেই মান্যতা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এ দিন বলেন, “এর ফলে পরবর্তী ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি হতে পারবে। আমার আশা, অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক শেষ হবে।”